বরিশালের বাবুগঞ্জে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে ব্যবহৃত একটি ট্রলার আগুনে পুড়ে গেছে। ঘটনাটি নিয়ে একটি পক্ষ বলছে, অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে আনসার সদস্যরা ডিজেল ছিটিয়ে ট্রলারটি পুড়িয়ে দিয়েছেন। আরেকটি পক্ষ বলছে, দুর্ঘটনাবশত ট্রলারে আগুন লেগেছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার কেদারপুর খেয়াঘাটে এ ঘটনা ঘটে। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে বাবুগঞ্জের ইউএনও নুসরাত ফাতিমার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যত দূর শুনেছি, বিষয়টি একটি দুর্ঘটনা। এরপরও আমরা প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের জন্য তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্তে কেউ দোষী হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনা সরেজমিন যাচাই করতে আমি বাবুগঞ্জে যাচ্ছি।’
পুড়ে যাওয়া ট্রলারটির মালিক আনোয়ার হোসেন। তিনিই ট্রলারটির চালক। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি সবার সামনেই হয়েছে, সবাই দেখেছে কী হয়েছে। ট্রলারটি খোয়া যাওয়ার পর আমি দিশাহারা। কারণ, আমার সম্বল ছিল এটাই। এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না, আমাকে ক্ষমা করুন।’
আনোয়ার হোসেন বলেন, গতকাল বেলা দুইটার দিকে তাঁর ট্রলারে মা ইলিশ সংরক্ষণে অভিযানে যান ইউএনও নুসরাত ফাতিমা। অভিযানে বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শিমুল রানী পাল ছাড়াও পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। মোল্লারহাট, কাশিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু জাল ও ইলিশ জব্দ করা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে স্থানীয় কেদারপুর খেয়াঘাটে ফিরে আসেন। এ সময় সবার উপস্থিতিতে ইউএনও বিভিন্ন এতিমখানায় জব্দ ইলিশ বিতরণ করেন এবং জব্দ করা জাল নদীতীরে পুড়িয়ে ধ্বংস করেন।
নাম গোপন রাখার শর্তে দুজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, জাল পোড়ানোর সময় হঠাৎ ইউএনও ট্রলারটির সামনে যান এবং তাঁর দেহরক্ষী আনসার সদস্যরা ট্রলারটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। তবে এর আগেই তুচ্ছ ঘটনায় ইউএনও আনেয়ারের ওপর চটে গেলে তিনি (আনোয়ার) পালিয়ে যান। তাঁরা বলছেন, আনোয়ার জব্দ করা কিছু মাছ সরিয়ে ফেলেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পালানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আপনারা যা বোঝার বুঝে নেন। আমি কিছুই বলতে পারব না। ঘটনার পর আমাকে ওখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাতে আমি অজ্ঞাত স্থানে ছিলাম। কোনো হুঁশ ছিল না। আমি কিছুই বলতে পারব না।’
ইউএনওর দেহরক্ষী আনসার সদস্য মামুন হাওলাদার ও সুকদেব দাসের ভাষ্য, ইউএনও নুসরাত ফাতিমা যখন বিভিন্ন এতিমখানায় জব্দ ইলিশ বিতরণ করছিলেন, তখন ট্রলারটির ভেতরে হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে ইউএনওকে জানালে তিনিসহ সবাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুন ছড়িয়ে পড়লে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে।
অভিযানে অংশ নেওয়া বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অভিযান থেকে ফিরে জব্দ করা ইলিশ এতিমখানায় বিতরণ করে তিনি নামাজ আদায়ের জন্য চলে যান। আগুন লাগার ঘটনার সময় সেখানে ছিলেন না। যত দূর শুনেছেন, তাতে এটি একটি দুর্ঘটনা। উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় কোনো ছাড় না দেওয়ায় স্থানীয় একটি মহল ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ। এ কারণেই বিষয়টিকে রং দিচ্ছে ইউএনওকে জব্দ করার জন্য।
বাবুগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, খবর পেয়ে তাঁরা ৯টা ৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হন। তবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি।