‘চিড়া-মুড়ি নিয়ে রংপুরের পথে বিএনপি নেতা’

সামনে যেই গাড়ি পাচ্ছেন, সেটাতেই উঠে পড়ছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। আজ সকালে শহরের নরেশ চৌহান সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ আগামীকাল শনিবার। গণসমাবেশের আগের দিন আজ শুক্রবার থেকে রংপুরের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুরগামী বাসগুলো দিনাজপুরের শেষ সীমানায় গিয়ে থেমে যাচ্ছে। তবে সব বাধা উপেক্ষা করেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা রংপুর যাচ্ছেন।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, গণসমাবেশে মানুষের উপস্থিতি ঠেকাতে রংপুরের সব রুটে বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশপাশের অনেক জেলাতেও বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বাস না পেলেও অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ভ্যান কিংবা প্রয়োজনে পায়ে হেঁটেই বিএনপির নেতা–কর্মীরা রংপুর পৌঁছাবেন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের নরেশ চৌহান সড়কে গিয়ে কথা হলো ঠাকুরগাঁও পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি মোশারফ হোসেনের সঙ্গে। এক হাতে বাজারের ব্যাগ। আরেক পানির বোতল। তখন বাসে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। ওই বাসে দিনাজপুরের কাহারোলের দশমাইল পর্যন্ত যাবেন। এরপর অন্য কোনো বাহনে উঠে রওনা দেবেন রংপুরের দিকে।

বিভিন্ন স্থানে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে রংপুর যেতে ধকল আছে। তবে এতে কোনো বিরক্তি নাই জানিয়ে মোশারফ বলেন, ‘গাড়িতে চড়ে বসলাম। দেখি কত দূর যাওয়া যায়। সঙ্গে চিড়া-মুড়ি, রুটি নিয়ে নিয়েছি। এটা দিয়ে কয়েকজনের দুই দিন চলে যাবে।’

শহরের নরেশ চৌহান সড়ক থেকে ঢাকার বাসগুলো ছেড়ে যায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হানিফ কাউন্টারে দেখা যায়, শ্রমিক দলের প্রায় ২০ নেতা-কর্মী দাঁড়িয়ে আছেন। সেখানে জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আবদুল জব্বারও আছেন। তাঁরাও ঢাকার বাসে চড়ে রংপুর যাচ্ছেন। আবদুল জব্বার বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে ঠাকুরগাঁও থেকে ৬০টি বাসে চড়ে নেতা-কর্মীরা রংপুরে গেছেন। যাঁরা যেতে পারেননি, তাঁরা আজ সকাল থেকে যাচ্ছেন।

গাড়িতে চড়ে বসলাম। দেখি কত দূর যাওয়া যায়। সঙ্গে চিড়া-মুড়ি, রুটি নিয়ে নিয়েছি। এটা দিয়ে কয়েকজনের দুই দিন চলে যাবে।
মোশারফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি

দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুরে পরিবহন ধর্মঘটের কথা শুনে বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা গতকাল রাতেই বাসভাড়া করে রংপুর পৌঁছেছেন। এর আগে আজ সকাল নয়টার দিকে শহরের কেন্দ্রীয় বাস ট্রার্মিনাল ও সত্যপীর সেতু এলাকায় বিএনপির কয়েক শ নেতা–কর্মীর ভিড় দেখা গেছে। তাঁদের অনেকের হাতেই বাজারের ব্যাগ। সামনে যেই গাড়ি পাচ্ছেন, সেটাতেই উঠে পড়ছেন।

সদর থানা বিএনপির কর্মী মো. হারুন বলেন, ‘দাবি আদায়ের জন্য প্রয়োজনে পায়ে হেঁটে হলেও সমাবেশে পৌঁছাব। সেখানে গাড়ি পেয়ে ভালোই হলো।’

কেন্দ্রীয় বাস ট্রার্মিনাল থেকে রংপুর রুটে প্রতিদিন ১৫ বাস চলাচল করে। আজ সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত তিনটি বাস চলছে। তবে বাসগুলো সৈয়দপুরের রাবেয়া মোড় পর্যন্ত গিয়ে থেমে যাচ্ছে। টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা শামসুল হুদা বললেন, আজ গাড়ির সব যাত্রীই বিএনপির নেতা-কর্মী।

সদর থানা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল রাজ্জাক বলেন, ‘সঙ্গে কাথা-কম্বল নিয়েছি। যেখানে বাধা আসবে, সেখান থেকে ভেঙে ভেঙে সমাবেশে চলে যাব। কোনো বাধাই আমাদের আটকাতে পারবে না।’

জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান গতকাল রাতেই রংপুর চলে গেছেন। আজ মুঠোফোন তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে ১৫ হাজার নেতা-কর্মী রংপুর বিভাগীর গণসমাবেশে যোগ দেবেন। গতকাল রাতেই প্রায় ৫ হাজার নেতা-কর্মী, সমর্থক রংপুর পৌঁছে গেছেন। আজ সকাল থেকেও মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে বিএনপির কর্মীরা রংপুর আসছেন।