ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী জামাল রানা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে হেলিকপ্টারে চড়ে এলাকায় এসেছেন। এ সময় তিনি এক সভায় বক্তব্যও দেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাৎক্ষণিকভাবে ওই প্রার্থীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
গতকাল বুধবার বিকেলে জামাল রানা ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে সদর উপজেলার কোড্ডার মিতালী ফুটবল খেলার মাঠে নামেন। জামাল রানা সদর উপজেলার কোড্ডা এলাকার বাসিন্দা। তিনি কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির যুব সংহতির সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমানে বিএনএম থেকে এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। বিএনএমের নির্বাচনী প্রতীক নোঙর।
নির্বাচনী আচরণবিধির ৮ (গ) ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচার কাজে হেলিকপ্টার বা অন্য কোনো আকাশযান ব্যবহার করা যাবে না। তবে দলীয় প্রধান যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু যাতায়াতের সময় হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট, ব্যানার বা অন্য কোনো প্রচারসামগ্রী প্রদর্শন বা বিতরণ করতে পারবেন না।
আচরণ বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা এর মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।
স্থানীয় লোকজন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা ১টার দিকে জালাল রানা হেলিকপ্টারে চড়ে সদর উপজেলার কোড্ডা মিতালী ফুটবল মাঠে নামেন। এ সময় তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা জড়ো হয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান এবং গলায় ফুলের মালা পরান। পরে তিনি কোড্ডা রেললাইন এলাকায় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আমি কখনো লাঙ্গলকে ছাড়ি নাই। কিন্তু লাঙ্গল আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আপনারা কেউ ভাববেন না, ব্যক্তিগত ভালোর জন্য লাঙ্গল ছেড়ে নোঙরে এসেছি। আমি ৩৫ বছর ধরে লাঙ্গল করেছি। কিন্তু বারবার লাঙ্গলকে নিয়ে এই এলাকায় ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। এই জন্য নোঙর নিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি।’
পরে তিনি কোড্ডা এলাকায় ভূঁইয়া বাড়িতে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এলাকার লোকজনের সঙ্গে সভা করেন। সভায় এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে বিএনএমের প্রার্থী জামাল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই গত মঙ্গলবার ইতালি থেকে দেশে আসে। তাকে নিয়ে হেলিকপ্টারে এলাকায় আসি। হেলিকপ্টার আমাদের নামিয়ে ঢাকায় চলে যায়। আমার ভাই ইতালি থেকে হেলিকপ্টার ভাড়া করেছে। আমি তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে এলাকায় এসেছি।...আপনি আচরণবিধি নিয়ে বলবেন, আমি জানি। আমি এলাকায় এলেই লোকজন জড়ো হয়।’
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সেলিম শেখ বলেন, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোশাররফ হোসেনকে আচরণবিধি দেখতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। গতকাল স্থানীয় একজন জামাল রানার আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে অভিযোগ করেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিকেল চারটার দিকে কোড্ডা এলাকায় পৌঁছে ওই প্রার্থীকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। ওই প্রার্থী আর আচরণবিধি লঙ্ঘন করবেন না বলে অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন।