ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনা

বাবা বিদেশে, দুই শিশুকে একা করে না-ফেরার দেশে মা-বোন

দুর্ঘটনায় নিহত মা সানিয়া বেগম ও মেয়ে নুরানি
ছবি: সংগৃহীত

জীবন-জীবিকার তাগিদে এক বছর আগে অবৈধভাবে সৌদি আরবে পাড়ি দেন মিল্টন শেখ। বাড়িতে রেখে যান তিন শিশুসন্তান ও স্ত্রী সানিয়া বেগমকে (৩০)। এখনো কাগজপত্র ঠিক হয়নি মিল্টনের। ফেরার উপায় নেই।

এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুর সদরের দিগনগর তেঁতুলতলা এলাকায় দুর্ঘটনায় সানিয়া বেগম ও তাঁর শিশুকন্যা নুরানি (১) নিহত হয়েছে। এমন অবস্থায় একা হয়ে পড়েছে মিল্টনের দুই শিশুসন্তান।

মিল্টনদের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বেজিডাঙ্গা গ্রামে। মাকে হারিয়ে দুই মেয়ে মিলি (১৪) ও মিনা (১০) এখন একা হয়ে পড়েছে। বাবা বিদেশে, মা না-ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় তারা কীভাবে বাঁচবে, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় এলাকাবাসী।

আজ বিকেল চারটার দিকে বেজিডাঙ্গা গ্রামে মিল্টন শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহত সানিয়া ও তাঁর মেয়ের লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছে। বাদ আসর বাড়ির পশ্চিম পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন করার কথা ছিল।

দরিদ্র পরিবারের সম্বল বলতে বারান্দাযুক্ত একটি চৌচালা টিনের ঘর। মা-মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে এলাকাবাসী বাড়িতে ভিড় করছেন। এর মধ্যে সদ্য মা ও বোন হারানো দুই মেয়ের সঙ্গে কথা হয়। বড় মেয়ে মিলি বেজিডাঙ্গা কাজী আমেনা ওয়াহেদ উচ্চবিদ্যালয়েরে নবম শ্রেণির ছাত্রী। আর ছোট মেয়ে মিনা স্থানীয় বেজিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

মিলি বলে, প্রতিদিন সকালে তাদের মা ঘুম থেকে ডেকে তুলতেন। সকালের নাশতা খাইয়ে স্কুলে পাঠাতেন। এখন মা নেই, তাদের কী হবে? কে তাদের দেখাশোনা করবে? মিনা বলে, সে সব সময় মায়ের কোলে ঘুমাত, এখন কোথায় ঘুমাবে বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে।

এলাকাবাসী জানান, মিল্টন অবৈধ পথে সৌদি আরব যাওয়ায় এখনই ফিরতে পারবেন না। কবে ফিরতে পারবেন, তা-ও জানা নেই। তবে স্ত্রী ও ছোট মেয়ের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছে তাঁকে। মিল্টনের বড় ভাই তৈয়ব শেখ বলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। মিল্টন ছোট। পরিবার ও সন্তানদের সুখের জন্য মিল্টন বিদেশ পড়ে আছেন। এর মধ্যে ভাইয়ের পরিবারের এমন দুর্যোগ কোনোভাবেই সহ্য হচ্ছে না। আশার কথা, তাঁদের মা-বাবা এখনো বেঁচে আছেন। তাঁরাই মা-হারা দুই মেয়েকে আগলে রাখবেন।

মিলি ও মিনার গৃহশিক্ষক ওবায়দুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় পাওয়া ক্ষতিপূরণ দুই বোনের পড়াশোনার কাজে আসবে। শুনেছেন, সরকার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা দেয়। টাকাটা পেলে দুই বোন পড়াশোনা করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার একটা উপায় খুঁজে পাবে।