সিলেটের বিজ্ঞানলেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ স্মরণে তাঁর হত্যার ঘটনাস্থলে অস্থায়ীভাবে নির্মিত দেয়াল-স্মৃতিস্তম্ভের লেখা মুছে ফেলা হয়েছে। ‘জ্ঞানের জ্যোতি ছড়াবে অনন্ত, অনন্তকাল’ শীর্ষক এ স্মৃতিলিখন সম্প্রতি কে বা কারা মুছে ফেলেছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর থেকে বিষয়টি জানাজানি হয়।
২০১৬ সালের ১২ মে অনন্ত হত্যার প্রথম বার্ষিকীতে এলাকাবাসীর সহায়তায় প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী মঈনুদ্দিন আহমদ জালালের (বর্তমানে প্রয়াত) ব্যবস্থাপনায় ঘটনাস্থলে অস্থায়ীভাবে নির্মিত দেয়াল-স্মৃতিস্তম্ভটি উন্মোচন করা হয়েছিল। এরপর প্রতিবছরই অনন্তকে হত্যার দিনে তাঁকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁর সহযাত্রী ও এলাকাবাসী। প্রতিবারই দাবি ওঠে, এ স্থানে স্থায়ীভাবে ‘অনন্ত স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মিত হোক।
অনন্তর বন্ধু সিলেটের সুপরিচিত শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী অরূপ বাউলের নকশায় নির্মিত দেয়াল-স্মৃতিস্তম্ভে তরবারির আদলের উপরিভাগে রয়েছে লাল কলমের মুখ। তরবারির আদলের কালো জমিনে সাদা অক্ষরে লেখা ‘জ্ঞানের জ্যোতি ছড়াবে অনন্ত, অনন্তকাল’। এরও নিচে লেখা আছে, ‘ওই খানে আমিও আছি, যেখানে সূর্য উদয়/প্রিয় স্বদেশ পাল্টে দেব তুমি আর আমি বোধ হয়’। এ ছাড়া দেয়াল-স্মৃতিস্তম্ভে অনন্তর নাম এবং জন্ম ও মৃত্যুতারিখ উল্লেখ করা ছিল।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর সিলেটের একাধিক স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে অনন্ত স্মরণে নির্মিত দেয়াল-স্মৃতিস্তম্ভের লেখা কে বা কারা মুছে দেয়। তবে এ স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর করা হয়নি।
আজ সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, স্মৃতিস্তম্ভের লেখা কালো রং দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে। স্তম্ভের দুটি স্থানে লাল রং দিয়ে লেখা রয়েছে, ‘তা গু ত’। কবে এ ঘটনা ঘটেছে, সঠিকভাবে কেউ বলতে পারছেন না। মূলত গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই বিষয়টি জানাজানি হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে অনেকে ক্ষোভ জানান বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে অনন্তর বন্ধু ও দেয়াল-স্মৃতিস্তম্ভের নকশাকার অরূপ বাউল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কে বা কারা স্মৃতিস্তম্ভের লেখা মুছে দিয়েছে। এটা দুঃখজনক। তবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত মুছে ফেলা লেখা পুনরায় লেখা হবে।’
এর আগে ২০১৫ সালের ১২ মে সকালে নিজ বাসা থেকে বেরোনোর পর নুরানি আবাসিক এলাকার চৌরাস্তার মোড়ে দস্তিদার দিঘির পাড়ে খুন হন অনন্ত। পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির কারণে তাঁকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে, এ অভিযোগে অনন্তর বড় ভাই রতেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০২২ সালের ৩০ মার্চ অনন্ত হত্যা মামলায় চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।