পাওনা টাকার দাবিতে জগৎসিংহপুর বহুমুখী উন্নয়ন সমবায় সমিতির বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের মানববন্ধন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নওগাঁ পৌরসভার জগৎসিংহপুর এলাকায় সমিতির প্রধান কার্যালয়ের সামনে
পাওনা টাকার দাবিতে জগৎসিংহপুর বহুমুখী উন্নয়ন সমবায় সমিতির বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের মানববন্ধন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নওগাঁ পৌরসভার জগৎসিংহপুর এলাকায় সমিতির প্রধান কার্যালয়ের সামনে

নওগাঁয় গ্রাহকের ‘১২ কোটি টাকা’ নিয়ে লাপাত্তা সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা

নওগাঁ সদর উপজেলায় একটি সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা গ্রাহকদের প্রায় ১২ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা গতকাল শুক্রবার সমিতির কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন ও আজ শনিবারও সমিতির সভাপতির বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানটির নাম জগৎসিংহপুর সূর্যমুখী বহুমুখী উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড। এটি নওগাঁ পৌরসভার জগৎসিংহপুর এলাকায় অবস্থিত। সমিতির সভাপতি ওই এলাকার বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মুকুল হোসেন এবং সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেন লাপাত্তা হয়েছেন বলে গ্রাহকেরা জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে জগৎসিংহপুর সূর্যমুখী বহুমুখী উন্নয়ন সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করা হয়। নওগাঁ জেলা সমবায় কার্যালয় থেকে এটির নিবন্ধন নেন জগৎসিংহপুর গ্রামের বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মুকুল হোসেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে অবৈধভাবে ব্যাংকের আদলে মাসিক ও বার্ষিক আমানত প্রকল্প, স্থায়ী বিনিয়োগ ও স্থানী আমানত নামে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে টাকা জমা রাখতে শুরু করেন। টাকা জমা রেখে গ্রাহকদের প্রতি মাসে মুনাফা দিতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। ধীরে ধীরে এ সমিতির গ্রাহকসংখ্যা ও আমানতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এভাবে গত পাঁচ বছরে আড়াই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে আনুমানিক ১২ কোটির বেশি টাকা সংগ্রহ করে সংস্থাটি।

গ্রাহকেরা বলেন, শুরুর দিকে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে আমানতের বিপরীতে গ্রাহকদের লভ্যাংশের টাকা নিয়মিত দিত প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু দুই-তিন মাস ধরে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও সমিতির লোকজন গ্রাহকদের আমানত ফেরত ও লভ্যাংশের টাকা দিতে টালবাহানা শুরু করেন। আমানতের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য গ্রাহকেরা চাপ দিলে ২ জুলাই মুকুল হোসেন, দেলোয়ারসহ সমিতির অন্যরা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। এখন আমানতের টাকা ফেরতের জন্য প্রতিদিনই গ্রাহকেরা সমিতির কার্যালয় ও সমিতির সভাপতি মুকুল হোসেনের বাড়ির সামনে ভিড় করছেন।

আনিছুর রহমান নামের একজন গ্রাহক বলেন, তিনি অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য। সমিতির সভাপতি মুকুল হোসেন ও তিনি দীর্ঘদিন একই ব্যাটালিয়নে চাকরি করেছেন। পূর্বপরিচিত হওয়ায় মুকুলের কথায় বিশ্বাস করে মুনাফা লাভের আশায় ৬ মাস আগে ২৪ লাখ টাকা সমিতিতে স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা করেন। প্রতি মাসে লাখে আড়াই হাজার টাকা করে মুনাফা দেওয়ার শর্তে তিনি ওই টাকা জমা দেন। টাকা জমা দেওয়ার পর থেকেই লভ্যাংশ দেওয়া নিয়ে সমিতির লোকজন টালবাহানা শুরু করেন। এর মধ্যেই ২ জুলাই থেকে মুকুল ও তাঁর সহযোগীরা সমিতির কার্যালয়ে তালা দিয়ে লাপাত্তা। তাঁদের ফোনেও পাচ্ছেন না।

শফিকুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক কয়েক ধাপে সমিতিতে ৬৩ লাখ টাকা জমা করেছেন। এখন সমিতির কর্মকর্তারা লাপাত্তা হওয়ায় টাকা জমা দেওয়ার কাগজপত্রসহ দিশাহারা হয়ে ঘুরছেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সমিতির সভাপতি মুকুল হোসেন ও সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে তাঁদের মন্তব্য জানা যায়নি।

আজ শনিবার মুকুল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর স্ত্রী সিঁথি বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গ্রাহকের কাছ থেকে আমানতের টাকা জমা দিয়ে তার বিপরীতে উচ্চহারে মুনাফা দিতে গিয়ে আমার স্বামী লোকসানের মধ্যে পড়ে গেছেন। অপরিকল্পিতভাবে সমিতি পরিচালনা করায় এখন তাঁর সব পুঁজি নাই হয়ে গেছে। গ্রাহকের চাপ সহ্য করতে না পারায় তিনি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। গ্রাহকেরা কয়েক দিন ধরে আমার বাড়ি ঘিরে রেখেছেন। আমাদের বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। আমার ছেলেকে মারধর করেছেন। দোষ করলে আমার স্বামী করেছেন, আমাদের কী দোষ?’

নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম রবিন শীষ বলেন, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সমিতির কোনো সদস্য এই বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তিনি নিজেই তদন্ত করবেন।