বর্ষায় সেতুর গার্ডারের নিচ পর্যন্ত পানি ছুঁয়ে যায়। এতে সড়ক যোগাযোগ চালু থাকলেও নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় সাহতা ধনাই নদের ওপর সেতুটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় এখন এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে গত বর্ষায় ট্রলারের ধাক্কায় সেতুর পিলার ভেঙে যায়। এর পর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে নদ থেকে কম উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করায় এই দুর্ভোগ। বর্ষা মৌসুমে সেতুর গার্ডারের নিচ পর্যন্ত পানি ছুঁয়ে যায়। এতে সড়ক যোগাযোগ চালু থাকলেও নৌপথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বারহাট্টার সাহতা বাজারসংলগ্ন ধনাই নদের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় এলজিইডি। ৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ দশমিক ৭ মিটার প্রস্থ সেতুটি নির্মাণের জন্য ২০১১ সালের আগস্টে এনটিটি-এমএআর (জেবি) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। নির্মাণের সময় দেড় বছর ধরা থাকলেও ২০১৪ সালের জুন মাসে সেতুর কাজ শেষ হয়। পরে তা চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু সেতুটি নিচু হওয়ায় নৌ চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। গত জুলাই মাসে একটি বালুবাহী ট্রলারের ধাক্কায় সেতুর গার্ডার ও তিনটি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এর পর থেকে সেতুটির ওপর দিয়ে ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি সেতুর ওপর দিয়ে ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান যাতে চলাচল করতে না পারে, সে জন্য ইটের গাঁথুনি দিয়ে পথ রোধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে সেতুটি দিয়ে শুধু সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করা সম্ভব।
সাহতা এলাকার বাসিন্দা সোহেল খান জানান, সেতুটি সঠিক উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়নি। নির্মাণের সময় এলাকার লোকজন আরেকটু উঁচু করে সেতুটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে তাদের খেয়ালখুশিমতো সেতু নির্মাণ করায় এখন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এ ছাড়া সেতু নির্মাণেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে আট বছরেই সেতুটির কয়েকটি পিলার ভেঙে অকেজো হয়ে পড়েছে।
সাহতা বাজারের ব্যবসায়ী দুর্জন খান বলেন, ‘নেত্রকোনার ইসলামপুর মোড় এলাকা থেকে সরাসরি বারহাট্টায় যাতায়াতের জন্য সাহতা সেতুটি নির্মাণের জন্য আমাদের প্রাণের দাবি ছিল। কিন্তু ভুল নকশায় নিচু সেতু নির্মাণ করায় এখন অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। শুরু থেকেই আমরা উচ্চতা বাড়িয়ে সেতু নির্মাণের দাবিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে স্মারকলিপি দিলেও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ তা মানতে নারাজ ছিল। তখন তারা বলেছিল, পানির স্তর বাড়লেও নৌ চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না। এখন নদীতে সামান্য একটু পানি বাড়লেই ব্রিজ ছুঁয়ে যায়। ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি সেতুর নিচ দিয়ে ছোট নৌকা চলাচল করতেও কষ্ট হয়।’
জানতে চাইলে নেত্রকোনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুর রহিম শেখ গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে তিন টনের বেশি ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস (এসইউপিআরবি) প্রকল্পের আওতায় সেতুটির উচ্চতা বাড়ানোর জন্য প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।