পাবনার সুজানগরে অস্ত্রের মুখে স্বামীকে জিম্মি করে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলার আসামিরা এলাকায় ‘কিশোর গ্যাং’ হিসেবে পরিচিত। নামে কিশোর গ্যাং হলেও এসব বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যের বয়স ১৮ বছরের বেশি। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রচ্ছায়ায় তাঁরা মাদক ব্যবসা, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকার কমপক্ষে ১২ বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ঘটনার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও তাঁদের গ্রেপ্তার না করায় গ্রামের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে ধর্ষণের শিকার নারী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এবং সেই সন্তান মারা গেছে—এমন অভিযোগ ওঠায় ওই নারীকে আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করছে পুলিশ। আজ সন্ধ্যার মধ্যে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে ওই দম্পতি ওয়াজ মাহফিল থেকে তাঁদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে কয়েকজন যুবক অস্ত্রের মুখে স্বামীকে জিম্মি করে ওই নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। পরে স্থানীয় লোকজন এসে তাঁদের উদ্ধার করেন। ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর স্বামী গত শনিবার ছয়জনকে আসামি করে আমিনপুর থানায় মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন সুজানগর উপজেলার সেলিম প্রামাণিক (২৩), মো. শরীফ (২৪), রাজীব সরদার (২১), রুহুল মণ্ডল (২৬), লালন সরদার (২০) ও সিরাজুল ইসলাম (২৩)।
ভুক্তভোগী নারী এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে তিনি ধর্ষণের ঘটনায় তাঁর গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ার কথা বলেছেন।
আজ সকালে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামটি জেলার বেড়া উপজেলার শেষ ও সুজানগর উপজেলার শুরুর দিকে অবস্থিত। কিছুটা দুর্গম হওয়ায় বেশ নীরব পুরো এলাকা। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। এ ঘটনায় তাঁরা যেন বাক্রুদ্ধ।
অন্যদিকে ভুক্তভোগী দম্পতির বাড়ি বেড়া উপজেলায়। তাঁদের বাড়িতে ভাঙাচোরা টিনের ঘর। মাত্র ছয় মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছে। বাড়িতে শোয়ার ঘরটি এখনো রঙিন কাগজে সাজানো।
ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা হয় গ্রামের ১২ থেকে ১৫ জনের সঙ্গে। তাঁরা সবাই ঘটনাটি জানেন। তাঁরা জানান, যেসব যুবকের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকেন। এলাকায় ‘কিশোর গ্যাং’ হিসেবে পরিচিত। টাকার বিনিময়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পক্ষে বিভিন্ন অপকর্ম করেন। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়ান। তাঁদের বিরুদ্ধে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, মাদক ব্যবসা, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকার কারণে তাঁদের অপকর্মগুলো প্রকাশ্যে উঠে আসে না। ধর্ষণের ঘটনাটিও তাঁরা ধামাচাপা দিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু এলাকায় পক্ষ-বিপক্ষ দুটি ধারা থাকায় ঘটনাটি প্রকাশিত হয়েছে, বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন মানুষ।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আসামিদের ব্যাপারে বলেন, ‘কিছু মানুষের ইন্ধনেই অভিযুক্ত যুবকেরা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। এলাকায় এহেন কোনো খারাপ কাজ নেই, তাঁরা করেন না। প্রশাসন তদন্ত করলেই সব বিষয় উঠে আসবে। আমরা চাই তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
জানতে চাইলে আমিনপুর থানার উপপরিদর্শক ও ধর্ষণ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস গ্রামবাসীর দেওয়া তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এলাকার চিহ্নিত বখাটে। তাদের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। এরা একটি কিশোর গ্যাং। তাদের সঙ্গে আরও কিছু কিশোর আছে, যারা বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত। ধর্ষণ মামলাটির সঙ্গে আমরা অন্য বিষয়গুলোও গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আশা করছি, খুব দ্রুতই তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে ভুক্তভোগী নারী এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে তিনি ধর্ষণের ঘটনায় তাঁর গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ার কথা বলেছেন। ওই নারী বলেন, ঘটনার পর পল্লিচিকিৎসকের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। তাঁর পেটে ব্যথা হচ্ছিল। রক্তপাত হচ্ছিল। এর একপর্যায়ে তাঁর ভ্রূণ বের হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘ওই নারীর দাবির বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি। তাঁকে পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ বিকেলের দিকে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করা হবে।’