ধর্ষণ
ধর্ষণ

নেত্রকোনায় ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে স্কুলছাত্রীর ‘আত্মহত্যা’, অভিযুক্ত বখাটের বিচারের দাবি

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে স্কুলছাত্রীর (১৫) ‘আত্মহত্যা’র ঘটনায় অভিযুক্ত বখাটের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে উপজেলার বাউসী ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়কে সচেতন ছাত্র সমাজ ও এলাকাবাসীর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

এতে ওই ছাত্রীর সহপাঠী ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ নানা-শ্রেণি পেশার লোকজন অংশ নেন।

ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী, ওই ছাত্রীর বড় ভাই, উপজেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নীলুফা সুলতানা, জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলপনা বেগম, নারী প্রগতি সংঘের উপজেলা কেন্দ্র ব্যবস্থাপক সুরজিত ভৌমিক, ইয়ুথ গ্রুপের সদস্য রূপালী বর্মণ প্রমুখ।
মারা যাওয়া ওই ছাত্রীর বাড়ি বাউসী ইউনিয়নের একটি গ্রামে। সে উপজেলার একটি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সে নারী প্রগতি সংঘ পরিচালিত বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি ও ইয়ুথ গ্রুপের সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।

অভিযুক্ত বখাটের নাম আকাশ হোসেন ওরফে প্রান্তর (২২)। তিনি উপজেলার সুসং ডহরপাড়া গ্রামের লিটন মিয়ার ছেলে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বখাটে আকাশ হোসেন প্রায় সময় ওই ছাত্রীকে স্কুলে আসা–যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করতেন। গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে ওই ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে বাড়ি থেকে বের হয়। এ সময় রাস্তায় ওত পেতে থাকা আকাশ তাকে জোর করে ধরে একটি স্থানে নিয়ে যান এবং ধর্ষণ করেন। পরে ওই ছাত্রী বাড়িতে এসে ঘটনাটি তার পরিবারকে জানায়।

কিছুক্ষণ পর সে সবার অজান্তে ঘরে থাকা কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে স্বজনেরা তাকে প্রথমে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ওই রাতেই তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়; কিন্তু সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র না পাওয়ায় তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার দুপুরে মেয়েটি মারা যায়। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে ওই ছাত্রীর ভাই বাদী হয়ে আকাশের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা করেন।

মহিলা পরিষদের নেত্রী নীলুফা সুলতানা বলেন, অভিভাবকেরা অসচেতন বলেই ঘরে ঘরে এমন বখাটে আকাশদের জন্ম হচ্ছে। তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি না হলে নারীরা এখনো নিরাপদ সমাজ পাবেন না।

নারী প্রগতি সংঘের কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সুরজিত ভৌমিক বলেন, ‘ওই মেয়ে আমাদের ইয়ুথ গ্রুপের সদস্য ছিল। বাল্যবিবাহ রোধসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করত। ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে মেয়েটি। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’ তিনি বলেন, বছরখানেক আগে একই ইউনিয়নের প্রেমনগর গ্রামে কাউসার নামের আরেক বখাটে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করে।

এ ব্যাপারে বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আসামি আকাশকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। আশা করছি, দ্রুত তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারব।’