ফরিদপুরে জীবন্ত রাসেলস ভাইপার সাপ ধরে বন বিভাগে জমা দেওয়া সেই ৩ ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট দেড় লাখ টাকা পুরস্কার দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। আজ মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রাসেলস ভাইপার ধরে আনা তিনজনের হাতে পুরস্কারের টাকার চেক তুলে দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক।
এর আগে নানা বিতর্কের পর গত রোববার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগ রাসেলস ভাইপার সাপ ধরে আনার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু তার আগেই পুরস্কারের আশায় জীবিত সাপ নিয়ে হাজির হন তিনজন। পরে তাঁদের ৩ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। আজ তাঁদের হাতে পুরস্কারের চেক তুলে দেওয়া হয়।
পুরস্কার পাওয়া তিন ব্যক্তি হলেন রেজাউল করিম, আজাদ শেখ ও শাহজাহান খান। তাঁরা ফরিদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দা। পুরস্কার পাওয়া আজাদ শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জেলা আওয়ামী লীগের ঘোষিত পুরস্কারের ৫০ হাজার টাকা পেয়েছি। ধন্যবাদ জেলা আওয়ামী লীগকে, তাদের কথা রাখার জন্য।’ রেজাউল করিম বলেন, ‘পুরস্কারের ৫০ হাজার টাকা আমার ও আমার পরিবারের খুব কাজে লাগবে।’
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ঘোষণা অনুযায়ী ওই ৩ জনকে পুরস্কার বাবদ ৫০ হাজার করে মোট দেড় লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ তাদের কথা রেখেছে। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের সঙ্গে ওই ঘোষণা সাংঘর্ষিক হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুরস্কারের ঘোষণার সিদ্ধান্ত গত রোববার সন্ধ্যায় প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে গত ২০ জুন প্রথমে রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) মারতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক। এ নিয়ে সমালোচনা শুরুর এক দিন পর ২১ জুন জেলা আওয়ামী লীগ ওই ঘোষণা থেকে কিছুটা সরে এসে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, নিজে সুরক্ষিত থেকে জীবিত রাসেলস ভাইপার ধরে বন বিভাগে জমা দিলে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সংশোধিত ঘোষণাও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী ছিল। ওই ঘোষণার পর ফরিদপুরের বিভিন্ন গ্রামে জীবিত রাসেলস ভাইপার ধরতে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। পরে গত রোববার সন্ধ্যায় দিকে জেলা আওয়ামী লীগ সর্বসম্মতভাবে রাসেলস ভাইপার–সংক্রান্ত ঘোষণাটি প্রত্যাহার করে নেয়।
ওই তিন ব্যক্তির জমা দেওয়া সাপগুলো ফরিদপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছিল। গতকাল সোমবার বিকেলে সেগুলো খুলনা বিভাগীয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কার্যালয়ে পৌঁছে দেন ফরিদপুর বন বিভাগের প্রহরী মো. জাহিদুল ইসলাম। সাপগুলো গ্রহণ করেন ওই কার্যালয়ের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা তন্ময় আচার্য।
তন্ময় আচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ফরিদপুর বন বিভাগ থেকে তাঁদের কাছে যে তিনটি রাসেলস ভাইপার সাপ পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে একটি সাপ মারা গেছে। আরেকটি মৃতপ্রায়, সেটিরও বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। শুধু একটি সাপ সুস্থভাবে বেঁচে আছে। তিনি বলেন, জীবিত সাপটির ব্যাপারে বন বিভাগ খুলনা ও ঢাকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।