তিতাসে যুবলীগ নেতা হত্যাকাণ্ড

চার দিনেও আওয়ামী লীগ নেতাসহ কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি

জামাল হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের নোয়াগাঁও এলাকার বাসিন্দা জামাল হোসেন হত্যাকাণ্ডের চার দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার এজাহারনামীয় ৯ আসামির কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

ওই আসামিরা হলেন তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের সুজন, আরিফ, ইসমাইল, মনাইরকান্দি গ্রামের শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার, জিয়ারকান্দি গ্রামের বাদল ও শাকিল, দাউদকান্দির গোপচর গ্রামের শাহআলম, জিয়ারকান্দি গ্রামের অলি হাসান ও কালা মনির।

জামাল হোসেনের পরিবারের সদস্যদের দাবি, মামলার ২ নম্বর আসামি আরিফ বোরকা পরা তিন দুর্বৃত্তের মধ্যে একজন। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলে যাওয়ার সময় তাঁর বোরকার নেকাব খুলে যায়। ইসমাইল হত্যাকাণ্ডের আগে জামাল হোসেনের পাশে ছিলেন। সোহেল তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর ভালো নাম শাহিনুল ইসলাম। এই মামলার বেশির ভাগ আসামি জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসাইন হত্যা মামলার আসামি। জামাল ওই হত্যা মামলার তদারকি ও তদবির করেন। মনির হত্যা মামলাটি আপস করার জন্য আসামিরা মনিরের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার ও জামালকে বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকেন।

পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, পুলিশ চাইলেই এ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে পারে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের চার দিনেও একজনকে ধরা হয়নি।

পুলিশের দাবি, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। গৌরীপুর ও তিতাস এলাকার আগের হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে জামালের ঘটনা মিলিয়ে দেখছে। আসামি গ্রেপ্তারে তারা বিভিন্ন এলাকায় তত্পরতাও চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার রাত আটটার পর কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর পশ্চিম বাজার বাইতুন নুর জামে মসজিদ এলাকার সুমাইয়া কনফেকশনারির সামনে বোরকা পরা তিন দুর্বৃত্ত গুলি করে জামালকে হত্যা করে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় নিহত জামালের স্ত্রী পপি আক্তার বাদী হয়ে দাউদকান্দি থানায় নয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা সাত থেকে আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্যরা।

জামালের বোন ও তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের ১ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য (মেম্বার) রিপা আক্তার বলেন, ‘মামলার আসামিরা ছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আরও লোকজন জড়িত। আমরা চাই প্রকৃত খুনি ও নেপথ্যে যাঁরা জড়িত, তাঁদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। কিন্তু একজন আসামিও এখনো গ্রেপ্তার হলো না।’

জামালের শ্যালিকা সুপা আক্তার বলেন, ‘যেখানে জামাল ভাই খুন হন, তার দোতলায় আমাদের বাসা। গুলির শব্দ শুনে আমি দোতলা বাসা থেকে নেমে তাঁকে কোলে তুলি। তখনো তাঁর জ্ঞান ছিল। মৃত্যুর আগে তিনি সুজন ও আরিফের নাম পর্যন্ত বলে যেতে পারেন। এরপর ঘাড় ফেলে দেন।’

মামলার সাক্ষী জিয়ারকান্দি গ্রামের মো. জাহিদ ও মো. সুমন বলেন, ‘গুলি জামালের বুকের মাঝে ও পেটের বাঁ পাশে করার পর আসামিরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান। তখন আমরা বোরকা পরা একজন আরিফকে শনাক্ত করি।’

অভিযোগ ও মামলা প্রসঙ্গে শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘একটি মহল আমাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করার জন্য একের পর এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আমি তিতাসের বাসিন্দা। ঘটনা ঘটেছে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজারে। এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি সেখানে ছিলাম না। গৌরীপুর বাজারে ওরা আধিপত্য বিস্তার করে। আমি তো সেখানে যাই না। এটা আমার এলাকাও না।’

দুপুরে দাউদকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। আসামিরা গা ঢাকা দেওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।’