মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিল এবং নতুন কমিটির দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এবং ভূমি কার্যালয়ের সামনে এসব কর্মসূচি পালন করেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সহশ্রাধিক নেতা-কর্মী।
কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন গঠিত কমিটির সভাপতি হাফিজ আল আসাদ বারেক। সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আহসান কবির হালদারকে বাদ দিয়ে গতকাল শুক্রবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন ও শেখ লুৎফর রহমানের যৌথ স্বাক্ষরে ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।
আজ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। সেখানে তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সভা করেন। সভায় গতকাল ঘোষিত কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে নতুন কমিটির দাবিতে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাফিজ আল আসাদ বারেক, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাহিদ খান, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এমিলি পারভীন, জেলা পরিষদ সদস্য আতিকুর রহমান শিল্পী, কামারখাড়া ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি চঞ্চল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ২০২১ সালের ৬ অক্টোবরে ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিনও ছিলেন। সম্মেলন উদ্বোধন করেন মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন প্রধান বক্তা।
সেদিন ৪৯৬ জন কাউন্সিলর তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এতে ৩২৮ ভোটে হাফিজ আল আসাদ বারেক সভাপতি এবং ২৩৬ ভোট পেয়ে আহসান হালদার কবির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে সম্মেলনে মাত্র ৬৯ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে তৃতীয় হয়েছিলেন বেলায়েত হোসেন লিটন মাঝি। এই দুজন নির্বাচিত হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা তৈরি করে জেলা আওয়ামী লীগের কাছে জমা দেন। জেলা আওয়ামী লীগ কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করে ঝুলিয়ে রাখে। গতকাল সবার অগোচরে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আহসান কবির হালদারকে বাদ দিয়ে একটি ‘পকেট কমিটি’ করা হয়েছে। সে কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এ কমিটি বাতিল করে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি নতুন কমিটির দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। অন্যথায় সামনে আরও কঠোর কর্মসূচির হুংকার দেন তাঁরা।
সভা শেষে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে সড়কটি অবরোধ করে সেখানে বসে পড়েন বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। পরে পুলিশ এসে তাঁদের উঠিয়ে দিলে সেখান থেকে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করা হয়। মিছিলটি উপজেলা পরিষদ, থানা অতিক্রম করে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে গিয়েও সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। সে সময় কমিটি বাতিল, যাঁরা কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজ আল আসাদ বলেন, ‘আমাকে এবং সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়ার তিন মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা পাঠিয়েছিলাম। সে কমিটির লোকজনকে বাদ দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিএনপি-জামাতের লোকজন নিয়ে মনগড়া কমিটি করা হয়েছে। ভোটে সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকা বেলায়েত হোসেনকে দিয়ে বিতর্কিত কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি দিয়ে কোনোভাবে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি সফল হবে না। সংগঠনের স্বার্থে আহসান কবির হালদারকে বহাল রেখে নতুন কমিটির দাবি সবার।
তবে কমিটি গঠনের ব্যাপারে সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির কোথাও কোনো অনিয়ম হয়নি।