শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। পলেস্তারা খসে অনেকে আহতও হয়েছে।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের অবস্থা জরাজীর্ণ। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। জরাজীর্ণ ভবনের কারণে বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রছাত্রী কমে যাচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ে কবে নতুন ভবন হবে, তা বলতে পারেন না উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হাঁসখালী, গাইয়াখালী, নাটানা, পুইজালা, দিঘলারআইট, কমলাপুর, লক্ষ্মীখালী, পশ্চিম ফটিকখালী, বৈকরঝুটি ও খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের ভবন এক যুগ ধরে বেহাল।
হাঁসখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিত্যরঞ্জন মণ্ডল জানান, ২০০০ সালে বিদ্যালয়ে তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও অফিসকক্ষ নির্মাণ করা হয়। ১০ বছর যেতে না যেতেই ভবনের ছাদ নষ্ট হয়ে যায়। কক্ষের দেয়াল ও পিলারে ফাটল দেখা যায়। ২০১৩ সালের দিকে ভবনটি ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ছাদের বড় বড় অংশ খসে খসে পড়তে থাকে। দেয়াল ও পিলারে ফাটল বড় হতে থাকে। ২০১৪ সালে ছাদ ধসে পড়ে শিক্ষক রমেশ চন্দ্র বৈরাগী মারাত্মক আহত হন। এ ছাড়া পলেস্তারা ধসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে কয়েকবার। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে টিনের ছাউনি দিয়ে একটি ঘর তৈরি করে সেখানে ক্লাস নেওয়া শুরু করেন তাঁরা।
নিত্যরঞ্জন মণ্ডল জানান, শ্রেণিকক্ষ না থাকায় অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না। ছাত্রছাত্রী কমে যাচ্ছে। ২০০০ সালের আগপর্যন্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৫২। কমতে কমতে এখন দাঁড়িয়েছে ৫৬–তে।
আশাশুনি সদর থেকে গাইয়াখালীর গ্রামের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ৫০ শতক জমির ওপর তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি এক তলা ভবন। পূর্ব-পশ্চিম লম্বা ওই ভবনেই ক্লাস চলছে। ভবনের বারান্দার ছাদের অধিকাংশ স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে রড বের হয়ে আছে। একেবারে পূর্ব দিকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। এ ঘরেরও অনেক স্থানের রড বের হয়ে আছে। দরজা-জানালার অবস্থাও নাজুক। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে জানালাগুলো। ভবনের বাইরের দিকের পলেস্তারাও খসে খসে পড়ছে। এ অবস্থায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাঁশের চটার ওপর টিনের ছাউনি দিয়ে ১২ ফুট প্রস্থ ও ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্য একটি ঘর তৈরি করেছে। সেখানে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক উষা মণ্ডল জানান, বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণ করা হয় ২০০৩ সালে। ২০১২ সালের দিক থেকে বিদ্যালয় ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। একপর্যায়ে ছাদ থেকে বড় বড় প্লাস্টার খসে পড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে টিনের ছাউনি দিয়ে ঘর নির্মাণ করে সেখানে ক্লাস নেওয়া হয়। স্থানসংকুলান না হওয়ায় পুরোনো ভবনের কয়েকটি কক্ষ এখনো ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে।
নাটানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপংকর মল্লিক জানান, বিদ্যালয়ে ২০১৩ সালে একটি নতুন ভবন করা হয়। সেখানে তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও একটি অফিস কক্ষ নির্মাণ করা হয়। ২০২০ সালের দিকে ভবনের ছাদ, দেয়াল ও পিলার নষ্ট হয়ে পলেস্তারা খসে পড়তে থাকে। এখন তাঁদের বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী কমে দাঁড়িয়েছে ৬৮।
আশাশুনি সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের উত্তর-দক্ষিণ বরাবর লম্বা বিদ্যালয় ভবনের তিনটি কক্ষের ছাদে ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। দক্ষিণ পাশের বারান্দার কার্নিশ ভেঙে পড়েছে। শৌচাগারের ছাদ ভেঙে পড়েছে কয়েক মাস আগে। ছাদ জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকমে শৌচাগারটি ব্যবহার করা হচ্ছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে ছাত্রছাত্রী কমে দাঁড়িয়েছে ৪৪ জনে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার বর্মণ বলেন, ১০টি বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েকটি বিদ্যালয়ে টিনের ছাউনি দিয়ে ঘর তৈরি করে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোর ভবন জরুরি ভিত্তিতে নির্মাণ করার জন্য জেলা অফিসে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ বরাদ্দ আসবে, তা বলতে পারবেন না।