নরসিংদী শহরের কাউরিয়াপাড়ায় রানা আকবর মোল্লা (৩৯) নামের এক যুবককে উপর্যুপরি কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় পেটে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তুষার (৩২) নামের আরেকজন। গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর ঈদগাহ মাঠে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহত রানা আকবর মোল্লা শহরের কাউরিয়াপাড়া এলাকার মৃত আলী আকবর মোল্লার ছেলে। কোনো ধরনের পদে না থাকলেও ২০ বছর ধরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সর্বশেষ তাঁতী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। দুই বছর প্রবাসে কাটিয়ে সম্প্রতি এলাকায় ফিরে ইট-বালু-সিমেন্টের ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। অন্যদিকে গুলিবিদ্ধ তুষার ওই এলাকার সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের ছেলে।
নিহত যুবকের স্বজন ও স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল রাতে এশার নামাজ শেষে পৌর ঈদগাহ মাঠে বসে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে গল্প করছিলেন রানা আকবর মোল্লা। রাত ৯টার দিকে সঙ্গে থাকা যুবকদের পার্শ্ববর্তী পূজামণ্ডপসংলগ্ন দোকান থেকে জিলাপি কিনতে পাঠান রানা। এ সময় তুষার তাঁর সঙ্গে ছিলেন। ঠিক সে সময় স্থানীয় ৮ থেকে ১০ জন যুবক অতর্কিতভাবে ওই মাঠে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রানাকে উপর্যুপরি কোপাতে শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এ সময় বাধা দিতে এগিয়ে এলে তুষারের পেটে গুলি করা হয়। দুজনই মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
উপস্থিত লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেছেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৃত অবস্থায় রানা আকবর মোল্লা ও পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তুষার নামের দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। নিহত যুবকের ঘাড়, হাত, পেট ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের অন্তত সাতটি আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাঁর লাশ এতটাই রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল যে তিনি গুলিবিদ্ধ ছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া তুষারকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
খবর পেয়ে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ হাসপাতালে এসে নিহত যুবকের লাশ উদ্ধার করে। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর লাশ মর্গে পাঠানো হয়। এ সময় শত শত মানুষ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে জড়ো হয়।
নিহত রানা আকবরের শ্বশুর মো. শহিদ মিয়া জানান, স্থানীয় খান আলামিন দলবল নিয়ে তাঁর জামাতাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছেন। এর আগেও কয়েক দফা রানাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন আলামিন। বছর দুই আগে শর্টগান আর দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রানার বাড়িতে হামলা চালিয়ে পুরো বাড়ি তছনছ করে দিয়েছিলেন। ওই সময় বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান রানা। ওই ঘটনার পরই তাঁকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি দেশে ফিরে সুস্থ জীবন যাপন করতে চেয়েছিলেন রানা। এবার আর আলামিনের হাত থেকে বাঁচতে পারলেন না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খান আলামিন ও রানা আকবর মোল্লা কাউরিয়াপাড়া এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। দলীয় কোন্দলে বিভাজিত স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দুজন ছিলেন তাঁরা। রানা আকবর মোল্লা ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম পক্ষের। অন্যদিকে খান আলামিন সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুলের অনুসারী।
জানতে চাইলে সদর আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রানা আকবর মোল্লাকে কারা এবং কেন এমন নির্মমভাবে হত্যা করল, পুলিশি তদন্তে তাদের নাম বেরিয়ে আসবে। তাঁর এমন মৃত্যুর খবর শুনে কষ্ট লাগছে।’ এ হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবার বিচার দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামানের মুঠোফোন নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে। রানা হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ময়নাতদন্ত শেষে আজ মঙ্গলবার দুপুরের পরই তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।