বিএনপির গণজাগরণ দেখে আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রশাসন ভীত বলে ফরিদপুর শহরের মধ্যে বিভাগীয় সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
আজ শুক্রবার বিকেলে ফরিদপুর শহরতলির কোমরপুরে আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির নেত্রী শামা ওবায়েদ বলেন, ‘গত বছরের জুন মাস থেকে আমরা একটি গণ-আন্দোলনে আছি। সেই আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। আমাদের বিভাগীয় গণসমাবেশগুলো তার উদাহরণ। আমাদের পল্টন অফিসের সামনে হামলা, মহাসচিব, মির্জা আব্বাসসহ শত শত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের পরও নেতা-কর্মীরা চাঙা আছে, মাঠে আছে। এসব দেখে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভীত, প্রশাসন ভীত। তাই আমাদের শহরের মধ্যে বিভাগীয় সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি।’
শামা ওবায়েদ বলেন, ‘ফরিদপুরে সমাবেশ করার জন্য আমরা শহরের মধ্যে বেশ কয়েকটি মাঠের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম, যেকোনো একটি মাঠ আমাদের দেওয়া হবে। কিন্তু প্রশাসন সেটার অনুমতি দেয়নি। কারণ, আওয়ামী লীগ এখন সাংগঠনিকভাবে দুর্বল, তারা বিএনপির গণজাগরণকে ভয় পায়।’
বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেত্রী বলেন, ‘বিএনপি শুধু ১০ দফা আন্দোলন করছে না। বিএনপি জনগণের ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছে। জনগণের কথা ভেবেই বিদ্যুতের দাম, দ্রব্যমূল্যের দাম কমানোর দাবি করা হচ্ছে। এসব আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা দেখে ফরিদপুরের আওয়ামী লীগ ভয় পেয়েছে। এ জন্য আমাদের শহরের মধ্যে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
শামা ওবায়েদ বলেন, ‘এর আগে শহরের অম্বিকা ময়দানে আমাদের গণ-অবস্থান উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে হামলা করা হয়েছে। কোমরপুরের মাঠে এমন ঘটনা ঘটবে না বলে প্রশাসন তাঁদের আশ্বস্ত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘শহরের সমাবেশে আমাদের লোকের ওপর হামলা হয়েছে। পরে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নামছে, এটাই সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। সেই প্রতিবাদের ভাষাই শেখ হাসিনার সরকার ভয়।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের বিষয়ে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেবদের তো কোনো দৈর্ঘ্য নাই, প্রস্থও নাই। ওনাদের সমাবেশে লোক হয় না, লোক ভাড়া করে আনতে হয়। বিরিয়ানি খাইয়ে আনতে হয়, তারপরও লোক হয় না। বিভিন্ন সমাবেশে ৫০০ থেকে ১ হাজার লোক দেখে তিনি বিরক্ত হয়ে যান। সেই বিরক্তি উনি নেতা-কর্মীদের ওপর প্রকাশ করেন। তাদের স্মার্ট বাংলাদেশ ধসে পড়ছে।’
পদত্যাগ করেও উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ও নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘এটা দুঃখজনক। আমার কাছে মনে হয়, রাজনৈতিক জীবনে তিনি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর আওয়ামী লীগ এই সুযোগ নিয়েছে। এর বিচার তাঁর এলাকার জনগণ করবে।’
আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করছে মন্তব্য করে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘আমাদের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আমাদের দলের প্রাণ। তাঁরা মামলা-হামলার ভয়ে অনেকে চুপ করে থাকেন, প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেন, নীরবে সহ্য করেন কিন্তু দল ছেড়ে কেউ যাননি। উকিল আবদুস সাত্তার সাহেবের মতো আরও কিছু মানুষও যদি দল ছেড়ে চলে যায়, তবুও এ দলের কোনো ক্ষতি হবে না।’
‘বিএনপির মধ্যে বিভিন্ন ধারা রয়েছে। শহরে সমাবেশ করতে দিলে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা ছিল’ পুলিশ কর্মকর্তার এ বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘অম্বিকা হলের মাঠে গণ-অবস্থানে আওয়ামী লীগ বিএনপির ওপর হামলা করেছে। এখানে বিএনপির অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং ছিল না। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মতো বড় রাজনৈতিক দলে প্রতিযোগিতা থাকবে। পদের জন্য লড়াই থাকবে। তবে দলের স্বার্থে যে কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে, দিন শেষে নেতা-কর্মীরা এসব কর্মসূচি সফল করেছেন। ওনাদের (পুলিশ কর্মকর্তা) ব্যাখ্যাটা দায়সারা। যেহেতু ওনারা আমাদের অনুমতি দেবেন না।’
মাঠ পরিদর্শনের সময় বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী, সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন ও আফজল হোসেন খান, জেলা যুবদলের সভাপতি রাজীব হোসেন, ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি বেনজীর আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।