আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া শর্ত মেনেই বিএনপি কর্মীর মালিকানাধীন মার্কেটের দোকান খুলেছেন ব্যবসায়ীরা
আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া শর্ত মেনেই বিএনপি কর্মীর মালিকানাধীন মার্কেটের দোকান খুলেছেন ব্যবসায়ীরা

বিএনপি কর্মীর মার্কেটের ভাড়া তুলবেন আ.লীগ নেতারা, সাদা কাগজে সইয়ের পর খুলল দোকানপাট

পাঁচ দিন তালাবদ্ধ করে রাখার পর বরিশালের গৌরনদী উপজেলার এক বিএনপি কর্মীর মালিকানাধীন মার্কেটটি খুলে দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখছেন। পাশাপাশি শর্ত দিয়েছেন, এখন থেকে মার্কেটের ভাড়ার টাকা মালিকের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে দিতে হবে।

উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাকাই বাজারের ওই মার্কেটের মালিকের নাম আক্কেল আলী সরদার (৪৫)। তাঁর মার্কেটের তিনটি তলায় ৪০টি দোকান ও দুটি ব্যাংকের শাখা আছে। তিনি অভিযোগ করেন, গৌরনদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন মুন্সীসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা গত শনিবার সকালে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বের করে দিয়ে মার্কেটটি তালাবদ্ধ করে দেন।

আজ সকাল থেকে মার্কেটের ১১ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাতে আওয়ামী লীগ ও বাজার কমিটির নেতারা মার্কেটটির বিষয়ে যৌথ সভা করেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতলেব তালুকদারের কাছে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে এসে দোকান খুলতে হবে ব্যবসায়ীদের। সে অনুযায়ী আজ দুপুর থেকে অনেক ব্যবসায়ীই স্বাক্ষর দিয়ে দোকান খুলেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে বাকাই বাজারে একটি দোকানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন গৌরনদী পৌর মেয়রসহ আওয়ামী লীগের নেতারা

মার্কেটটির ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘গতকাল রাতে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমানসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা বাকাই বাজারে আমাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে আমাদের ২৫ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এরপর মেয়র হারিছুর রহমান সিদ্ধান্ত দেন, আক্কেল আলীর মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে পারবে, তবে এখন থেকে মাসিক ভাড়া খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতলেব তালুকদারের কাছে দিতে হবে। এই শর্ত যাঁরা মানবেন, তাঁরাই দোকান খুলতে পারবেন। যাঁরা এই শর্তে রাজি থাকবেন, তাঁরা যেন আজ খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতলেব তালুকদারের কাছে গিয়ে আরেকটি সাদা কাগজে সই দিয়ে দোকান খোলেন।’

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমি মার্কেটের মালিকের সঙ্গে জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি করেছি। এখন নেতার কাছে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে দোকান খুলব কেন?’

বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মতলেব মাতুব্বর প্রথম আলোকে বলেন, সব দোকানপাট খুলে দেওয়া হচ্ছে। কী শর্তে খোলা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান নির্দেশ দিয়েছেন ঝামেলা মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ভাড়ার টাকা এক জায়গায় গচ্ছিত থাকবে।’ কার কাছে থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

মার্কেটটির মালিক ও বিএনপি কর্মী আক্কেল আলী সরদার আজ দুপুরে প্রথম আলোক বলেন, ‘গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের নেতাদের দেওয়া সিদ্ধান্তের পর মার্কেটের ব্যবসায়ীরা আমার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের শর্তের বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত তাঁরা জানতে চান। শর্ত মেনে খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতলেব তালুকদারের কাছে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে ব্যবসায়ীদের দোকান খুলতে বলেছি আমি। আমার পরিস্থিতি যাই হোক, ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে হবে। আমার সিদ্ধান্তের পর ব্যবসায়ীরা স্বাক্ষর করে এসে দোকানপাট খুলছেন।’