প্রাকৃতিক ছড়ার ওপর দেওয়া বাঁধ কাটা হচ্ছে। আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায়
প্রাকৃতিক ছড়ার ওপর দেওয়া বাঁধ কাটা হচ্ছে। আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায়

প্রভাবশালীদের দেওয়া সেই বাঁধ কাটা হচ্ছে

চট্টগ্রামে বন ডুবিয়ে হ্রদ তৈরিতে প্রভাবশালীদের দেওয়া সেই বাঁধ কেটে দেওয়া হচ্ছে। আজ শনিবার বেলা সাড়ে তিনটায় বাঁধ কাটার কাজ শুরু হয়। শ্রমিকেরা কোদাল দিয়ে এই বাঁধ কাটছেন। এ খবর পেয়ে বাঁধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১০০ কৃষক সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। বন বিভাগ এই বাঁধ কাটছে।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া বনের প্রায় আড়াই হাজার একর বনভূমি ডুবিয়ে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সেই হ্রদে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। হ্রদটি তৈরি করা হয়েছে বনের সোনাকানিয়া নামের একটি ছড়ায় বাঁধ দিয়ে। বাঁধের দৈর্ঘ্য ২০০ ফুটের মতো। প্রস্থ ২০ ফুট ও উচ্চতা ১০০ ফুট।

আজ প্রথম আলোতে ‘বন ডুবিয়ে প্রভাবশালীদের হ্রদ’ শীর্ষক প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালীদের নাম এবং বাঁধের কারণে বন, পাহাড় ও কৃষিজমির ক্ষতির চিত্র তুলে ধরা হয়। বন বিভাগের দাবি, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়া শুরু করলেও সদ্য সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য (চট্টগ্রাম-১৫) আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।

তিন বছর আগে বাঁধ করা হলেও এত দিন ধরে তা অপসারণ করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে আজ এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বাঁধ কেটে দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে বন বিভাগ।

প্রাকৃতিক ছড়ার ওপর দেওয়া বাঁধ কাটা হচ্ছে। আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায়

বাঁধ কাটার কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বন বিভাগের চট্টগ্রাম সদরের সহকারী বন সংরক্ষক মারুফ হোসেন এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেন। এ ছাড়া বন বিভাগের প্রায় ৬০ জন বনকর্মী উপস্থিত আছেন।
সহকারী বন সংরক্ষক মারুফ হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে প্রথম আলোকে বলেন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে বনের জায়গায় দেওয়া বাঁধ অপসারণ শুরু করেছেন তাঁরা। যত সময় লাগুক আজকের মধ্যে এই অবৈধ বাঁধ পুরোপুরি কেটে দেওয়া হবে। এরপর এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেবেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

বাঁধ কাটার কাজ করছেন অন্তত ৩০ শ্রমিক। তাঁরা কোদাল দিয়ে বাঁধের মাঝ বরাবর অংশ কেটে পানিপ্রবাহের পথ তৈরি করছেন। মাটি নরম করার জন্য শ্যালো মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। আর বাঁধ এলাকায় নির্মিত টিনের ঘর ভেঙে দিয়েছেন ক্ষুব্ধ কৃষকেরা।

প্রাকৃতিক ছড়ার ওপর দেওয়া বাঁধ কাটা হচ্ছে। আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায়

ঘটনাস্থলে উপস্থিত চারজন কৃষক প্রথম আলোকে বলেন, আজ তাঁদের অনেক বড় খুশির দিন। কেননা এই বাঁধের কারণে তাঁদের কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে। পানি না থাকায় চাষাবাদ করতে পারেননি। বনে অবৈধভাবে বাঁধ দেওয়ায় তাঁরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন বাঁধ কেটে দেওয়া হচ্ছে। আগের মতো পানি পাওয়া যাবে। তাতে চাষাবাদ করতে পারবেন।

বন বিভাগ বলছে, হ্রদ তৈরির কারণে গামারি, সেগুন, চিকরাশি, অর্জুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় প্রায় পাঁচ লাখ গাছ মারা গেছে। ডুবে যাওয়া জায়গার মধ্যে বন্য হাতির চলাচলের পথ ছিল। খ্যাঁকশিয়াল, শজারু, বন্য শূকর, বনমোরগ, ময়ূর, গুইসাপ, অজগরসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী এবং নানা প্রজাতির প্রাণী বাস করত সেখানে।
কৃষকেরা বলছেন, বাঁধ দেওয়ার ফলে ছড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এতে লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার ৪ হাজার ২৫৫ একর জমির চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষকেরা শুরু থেকেই সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি।

বনের আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা বলেন, হ্রদটিতে শুষ্ক মৌসুমে পানির গভীরতা থাকে ৪৫ ফুটের মতো। তবে বর্ষায় গভীরতা বেড়ে প্রায় ৬০ ফুট পর্যন্ত দাঁড়ায়। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা হয়। হ্রদে নিয়মিত টিকিট কেনার বিনিময়ে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ দেওয়া হয়। একেকজনের কাছ থেকে নেওয়া হয় তিন থেকে চার হাজার টাকা। পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেওয়ার জন্য দুটি নৌকা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, হ্রদ তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা মূলত সেখানে একটি বড় পর্যটনকেন্দ্র করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন।