মাদারীপুরে মহাবিপন্ন প্রজাতির একটি গাঙ্গেয় শুশুক উদ্ধার করেছেন স্থানীয় লোকজন। আজ সোমবার দুপুরে শহরের পুরানবাজার গ্রোইন চত্বরসংলগ্ন আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে শুশুকটি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া শুশুকটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৪ ফুট এবং প্রস্থ ২ ফুট ১০ ইঞ্চি।
প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএনের লাল তালিকায় থাকা এ প্রাণীটি ডলফিনের একটি প্রজাতি। এটি সবচেয়ে বেশি টিকে আছে বাংলাদেশে। বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আড়িয়াল খাঁ নদে শুশুকটি অসুস্থ অবস্থায় নদের পাড়ে এসে আটকা পড়ে। বিষয়টি স্থানীয় কয়েকজন যুবক দেখতে পেয়ে তাঁরা শুশুকটিকে নদের পানিতে নেমে উদ্ধার করে পাড়ে তুলে আনেন। এরপর তাঁরা মুঠোফোনে বন বিভাগকে এ খবর জানান। কিন্তু বন বিভাগ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে তাঁরা শুশুকটিকে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। পরে শুশুকটিকে আড়িয়াল খাঁ নদের গভীরে নিয়ে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাঈদ মাতুব্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, নদের গ্রোইন চত্বরে থাকা ড্রেজারের সঙ্গে আঘাত পেয়েছে শুশুকটি। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। যখন পাড়ে তোলা হয়, তখন শুশুকটি নড়াচড়া করছিল। দাঁত বের করছিল। তবে শুশুকটি খুব দুর্বল ও অসুস্থ দেখা যাচ্ছিল। আমরা চেষ্টা করি শুশুকটিকে সুস্থ করতে। পরে নদের গভীরে গিয়ে শুশুকটি ছেড়ে দিই। তখন সাঁতরে শুশুকটি চলে যায়।’
মাদারীপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বেদানন্দ হালদার প্রাণীটির ছবি দেখে প্রথম আলোকে বলেন, এ প্রাণী গাঙ্গেয় শুশুক নামে পরিচিত। ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও এই ধরনের প্রাণী নদ-নদীতে প্রায়ই দেখা যেত। এখন মহাবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় এই শুশুকটি। নদ-নদীতে বাঁধ ও সেচ অবকাঠামো নির্মাণে ডলফিনের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে নদীতে কারেন্ট জালের ব্যবহার, নদীদূষণ, দখলসহ নানা কারণে এই প্রাণীগুলো বিলীন হয়ে গেছে, মারা গেছে।
তবে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মহাবিপন্ন শুশুক উদ্ধারের ব্যাপারে তাঁরা কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন। পরে জেলার ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমকে শুশুকটির ছবি দেখানো হলে তিনি নিশ্চিত হন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সমুদ্রে নিম্নচাপ হওয়ায় ডলফিনটি দলছুট হয়ে মিঠাপানিতে চলে আসতে পারে। এ ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী এর আগে কখনো আড়িয়াল খাঁসহ জেলার অন্য কোনো নদীতে দেখা যায়নি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমাদের একটি টিম পাঠানো হয়েছে।’