ক্ষেতলালের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের মেঝেতে ফাটল ধরেছে
ক্ষেতলালের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের মেঝেতে ফাটল ধরেছে

জয়পুরহাট

বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধনের আগেই মেঝেতে ফাটল

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলাবিশিষ্ট নতুন ভবন উদ্বোধনের আগেই মেরামত করা হচ্ছে। ভবনের নিচতলার মেঝে ফেটে গেছে। সেখানে নতুন করে ঢালাই করা হচ্ছে। মেঝের ফাটল ও ভবনের রংকরণ কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। তবে প্রধান শিক্ষক উল্টো কাজের মান সন্তোষ হয়েছে বলে প্রত্যয়ন দিয়েছিলেন।

বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণকাজের অনিয়ম তদন্তের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। ৮ জানুয়ারি চিঠি দিয়ে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। ১১ জানুয়ারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে তদন্তের নির্দেশনার চিঠিটি পৌঁছায়।

এ সম্পর্কে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণকাজের অনিয়ম সরেজমিন তদন্তের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছয়টি শ্রেণিকক্ষ ও একটি ভান্ডারকক্ষের তিনতলার একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এ কাজের মোট বরাদ্দ ১ কোটি ২৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৩৯ টাকা। ঠিকাদার ১ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার ৭৮৩ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। গত বছরের ২৮ আগস্ট কাজের মেয়াদ শেষ হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজটি বাস্তবায়ন করছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন তিনতলার ভবনের নির্মাণকাজের মূল ঠিকাদার ছিলেন দিনাজপুরের মহিবুল ইসলাম। তবে ক্ষেতলালের স্থানীয় ঠিকাদার মো. ফরিদ কাজটি করেছেন। শুরু থেকেই নতুন ভবন নির্মাণকাজের গুণগত মান নিয়ে শিক্ষকেরা প্রশ্ন তোলেন। স্থানীয় ঠিকাদার তাঁদের কথায় পাত্তা দেননি। আবার বাস্তবায়কারী সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিপ্তরের ক্ষেতলাল উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকমতো তদারকি করেননি। এ অবস্থায় ঠিকাদার যেততেনভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করেন। কিছুদিন পর বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের মেঝেতে ফাটল দেখা দেয়। নতুন ভবনের রং ফ্যাকাসে হয়। নতুন ভবনের এসব অনিয়মের কথা শিক্ষকেরা স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা প্রকৌশলীকে জানান। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিল আফরোজ কাজটি সম্তোষজনক হয়েছে বলে প্রত্যয়ন দেন। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিল আফরোজের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি।

নতুন ভবন উদ্বোধনের আগেই মেঝে ফাটল ও রং ফ্যাকাসে হওয়ার ঘটনাটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান নতুন ভবন অনিয়মের ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। এর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বগুড়ার প্রকৌশলী, ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নতুন ভবন পরিদর্শন করেন। এরপর ভবনের মেঝের ঢালাই ও ভবনের রঙের কাজ নতুন করে শুরু করা হয়।

হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, যদি নির্মাণকাজে অনিয়ম না হতো, তা হলে ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার পর আবার নতুন করে এসব কাজ করা হতো না।

উপজেলা প্রকৌশলী রাশেদ ইমরান বলেন, ‘কাজের মেয়াদ গত বছরের আগস্টে শেষ হয়েছে। আমরা এখনো ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ বুঝে নিইনি। এলজিইডির বিভাগীয় প্রকৌশলী ভবনটি পরির্দশন করে নির্মাণকাজে ক্রুটি পেয়েছিলেন। সেই কাজগুলো ঠিকাদার নতুন করে দিচ্ছেন। ঠিকাদারকে চূড়ান্ত বিল দেওয়া হয়নি। জমানতের টাকাও রয়েছে।’