মাগুরা পৌর এলাকার বাসিন্দা হাসিবুল হাসান। দুই সপ্তাহ আগে ঢাকায় গিয়েছিলেন। এই সময়ে লেনদেন করতে গিয়ে তাঁর পকেটে এক ও দুই টাকার কয়েকটি কয়েন জমা হয়। মাগুরায় ফেরার দুই সপ্তাহ পরও সেগুলো তাঁর পকেটেই রয়ে গেছে। হাসিবুল বলেন, ‘মাগুরায় কোনো দোকানে কয়েন দিতে গেলে মনে হয়, আমি অচল পয়সা দিচ্ছি। কেউই নিতে চান না।’
একই রকম ভাষ্য মাগুরা শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামসংলগ্ন চা–দোকানি রবিউল ইসলামের। এই যুবক বলেন, ‘এখানে কোনো বাজারেই ক্রেতা-বিক্রেতা, কেউই এক ও দুই টাকার কয়েন নিতে চান না। ফলে কারও কাছ থেকে এক টাকা বেশি নিতে হচ্ছে, কারও কাছ থেকে কম। অথচ জেলার বাইরে গেলেই সব কয়েন লেনদেন হয়।’
মাগুরার চার উপজেলা সদরের বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। এখানে দুই টাকার কাগজের নোটের লেনদেন স্বাভাবিক। এমনকি পাঁচ টাকার কয়েন নিয়েও কারও আপত্তি নেই। তবে এক ও দুই টাকার কয়েন যেন ‘অচল পয়সা’।
এক ও দুই টাকায় যেসব পণ্য পাওয়া যায়, তার মধ্যে বেশি কেনাবেচা হয় চকলেট, শ্যাম্পু ও দেশলাই। কয়েনের বদলে এসব পণ্য দিয়ে কাজ চালানোর প্রবণতা দেখা যায় দোকানগুলোতে।
এটাকে একটা বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন মাগুরা শহরের পুরাতন বাজারের মুদি ব্যবসায়ী মাজেদ হোসেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কারও পণ্যের দাম এল ৬১ টাকা। ১ টাকার কয়েন লেনদেন হয় না বলে নিতে হয় ৬০ টাকা। এভাবে ১ টাকা করে প্রতিদিন ১০০ ক্রেতাকে ছাড় দিলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়। বছরের ৩৬৫ দিন হিসাব করলে ক্ষতি দাঁড়ায় ৩০ হাজার টাকার ওপরে। যে ক্ষতি হয়তো হিসাবেই ধরছেন না কেউ।
কয়েন লেনদেন না হওয়ায় ছোট ব্যবসায়ীরা বেশি বিপাকে পড়েছেন বলে মনে করেন মাগুরা শহরের হাসপাতালপাড়ার চা বিক্রেতা মানিক মিয়া। তিনি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কাপ চা পাঁচ টাকা থেকে ছয় টাকায় বিক্রি শুরু করেছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মানিক প্রথম আলোকে বলেন, ১ টাকার কয়েন না চলায় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কাপ চা ১ টাকা কমে ৫ টাকাতেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে চলছে।
মানিকের চায়ের ওই দোকানে বসা একাধিক ক্রেতা অবশ্য বললেন অন্য পক্ষের কথা। তাঁদের ভাষ্য হচ্ছে, কয়েনের লেনদেন না হওয়ায় বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছেন আসলে ক্রেতারাই। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের ওই এক ও দুই টাকা ছেড়ে যেতে হচ্ছে। আর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় বিষয়টি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রূপ নিচ্ছে।
বাজারে এখন এক ও দুই টাকায় যেসব পণ্য পাওয়া যায়, তার মধ্যে বেশি কেনাবেচা হয় চকলেট, শ্যাম্পু ও দেশলাই। কয়েনের বদলে এসব পণ্য দিয়ে কাজ চালানোর প্রবণতা দেখা যায় দোকানগুলোতে। তবে সবার যে এসব পণ্যের চাহিদা থাকে, তা নয়। এ কারণে অনেক ক্রেতা ওই টাকার দাবি ছেড়ে দেন।
এক ও দুই টাকার কয়েনের লেনদেন না হওয়ার প্রশ্নে ক্রেতা–বিক্রেতারা একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। অনেকে আবার অভিযোগ করেন, ব্যাংকে গেলেও ধাতব মুদ্রার কয়েনগুলো নেওয়া হয় না। এ বিষয়ে মাগুরা শহরের কয়েকটি সরকারি–বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েন লেনদেন বন্ধে ব্যাংকের কোনো হাত নেই। বরং তাঁদের ভল্টগুলো কয়েনে ভর্তি। পাঁচ টাকার কয়েনের চাহিদা থাকলেও কেউ তাঁদের কাছ থেকে এক বা দুই টাকার কয়েন নিতে চান না।
মাগুরা সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক রাশিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সব ব্যাংকের ভল্টে একটা নির্দিষ্টসংখ্যক কয়েন জমা রাখার নিয়ম আছে। তাঁরা সেটা পালন করেন। ওই পরিমাণের অতিরিক্ত কয়েন ব্যাংক জমা নিতে পারে না।
রাশিদুল ইসলাম বলেন, কেবল এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যেই কয়েন লেনদেনে অনীহা দেখা যায়। এটা দূর করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজন হলে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে হবে।