বিক্ষুব্ধ লোকজনের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত শেরপুর জেলা কারাগার ঠিক হতে প্রায় এক মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর শেরপুর পৌরসভার দমদমা কালীগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত জেলা কারাগারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে কারাগারের বিভিন্ন মালামালসহ তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
গতকাল মঙ্গলবার দিনভর শেরপুরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য ও শিক্ষার্থীরা কারাগারের বিভিন্ন স্থাপনায় পড়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন।
কারাগার কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট বিকেলে ১০–১২ হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা, রামদা, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। তাঁরা বন্দীদের ওয়ার্ড ভেঙে তছনছ করে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষের হামলার মুখে কারারক্ষীরা অসহায় হয়ে পড়েন। এ সময় কারাগারের ৫১৮ জন বন্দী পালিয়ে যান। হামলাকারীরা কারাগারের ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, চায়নিজ রাইফেলের ৮৬৪টি গুলি, শটগানের ৩৩৬টি গুলি ও কারাবন্দীদের জন্য মজুত করা খাদ্যসামগ্রীসহ টাকাপয়সা লুট করেন। সেই সঙ্গে কারাগারের প্রশাসনিক ভবনসহ মূল্যবান রেকর্ডপত্র, গাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। এতে কারাগারের তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান কারা তত্ত্বাবধায়ক হুমায়ন কবীর খান।
গণপূর্ত বিভাগের শেরপুরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ইতিমধ্যে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলা কারাগার পরিদর্শন করেছেন। হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ফলে কারাগারের প্রশাসনিক ভবন, কর্মকর্তাদের বাসভবন, কারারক্ষীদের ব্যারাক, বন্দীদের থাকার ওয়ার্ডসহ কারাগারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হামলায় কারাগারের দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার হিসাব প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেছে।
মো. আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, কারাগারের প্রশাসনিক ভবন ও কর্মকর্তাদের বাসভবনের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। প্রশাসনিক ভবন ও অন্যান্য স্থাপনার সিভিল, বৈদ্যুতিক ও স্যানিটারি কাজের জন্য প্রয়োজন দেড় কোটি টাকা। প্রশাসনিক ভবন সম্পূর্ণভাবে মেরামত করতে ১৫–২০ দিন এবং বন্দীদের ব্যারাকগুলো মেরামত করতে ৩ থেকে ৫ দিন সময় লাগবে। সব মিলিয়ে জেলা কারাগার ঠিক করতে প্রায় এক মাস লাগবে। শিগগিরই মেরামতকাজ শুরুর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে এ জন্য কারা মহাপরিদর্শক পরিদপ্তর থেকে দ্রুত অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, কারাগারের প্রধান ফটক, কারারক্ষীদের ব্যারাক, কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ও কারাধ্যক্ষের বাসভবন এবং প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুর ও আগুনে পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন এখনো আছে। কারাগারের রান্নাঘর, বন্দীদের থাকার জায়গা, ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামিদের থাকার সেলসহ পুরো এলাকায় ভাঙচুর ও আগুনে পোড়ার দাগ স্পষ্ট। পুরো কারাগার লন্ডভন্ড। শেরপুরের কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কারাগারের ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন। আর কারাগারের মসজিদ-সংলগ্ন একটি শেডে (বন্দীর স্বজনদের বিশ্রামের বসার স্থান) কারাগারের কর্মকর্তারা দাপ্তরিক কাজ করছিলেন।
কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক হুমায়ন কবীর খান বলেন, ঘটনার দিন কারাগারে আটক ৫১৮ জন বন্দী পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে চার–পাঁচজন আত্মসমর্পণের জন্য যোগাযোগ করেছিলেন। তবে কারাগারে রাখার মতো অবস্থা না থাকায় তাঁদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। কারাগারে হামলার ঘটনায় কারাধ্যক্ষ লিপি রানী সাহা বাদী হয়ে ১১ আগস্ট সদর থানায় মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০–১২ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। কারাগার থেকে লুট হওয়া ৯টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৫টি উদ্ধার হয়েছে। সেগুলো সেনাবাহিনীর হেফাজতে আছে।