‘সুমনের বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। সুমন পড়ালেখা কইরা ইঞ্জিনিয়ার হইতে চাইছিল। কিন্তু ওই মেয়ের কারণে ওর স্বপ্ন ভাইঙ্গা গেল।’ হত্যার শিকার একাদশ শ্রেণির ছাত্র সুমন মিয়ার (১৭) লাশ বাড়িতে পৌঁছানোর পর তার মা কল্পনা বেগম আহাজারি করে এসব কথা বলেন।
সুমনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে আজ মঙ্গলবার বিকেলে শেরপুর পৌরসভার বারাকপাড়া (নিমতলা) এলাকার বাড়িতে এসে পৌঁছায়। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সুমনের মায়ের আহাজারিতে স্বজন ও প্রতিবেশীদের চোখও পানিতে ভিজে ওঠে।
কল্পনা বেগম আরও বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সময় ওই মেয়ের সঙ্গে সুমনের পরিচয় হয়। এরপর দুজনে একই কলেজে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গইড়া ওঠে। মেয়েটি সুমনকে বিয়ে করতে চাইছিল। কিন্তু আমি না করছিলাম। মেয়েটি আমার কথা শুনে নাই। সে আমার ছেলেরে বিয়ার কথা বইলা বাড়ি থাইকা ডাইকা নেয়। এরপর আমার বাবা (সুমন) আর বাড়িতে আসে নাই। আইজ ও (সুমন) বাড়িতে ঠিকই আসলো। কিন্তু জীবিত নয়, লাশ হইয়া।’
অপহরণের সাত দিন পর গতকাল সোমবার দিবাগত গভীর রাতে শেরপুর শহরের সজবরখিলা এলাকার একটি বাড়ির উঠান থেকে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় কলেজছাত্র সুমনের লাশ উদ্ধার করে সদর থানা-পুলিশ। নিহত সুমন কসবা বারাকপাড়া (নিমতলা) এলাকার রাজমিস্ত্রি মো. নজরুল ইসলামের ছেলে। সে শেরপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। ৪ নভেম্বর থেকে সে নিখোঁজ ছিল।
আজ বিকেলে সরেজমিনে পৌরসভার বারাকপাড়া (নিমতলা) এলাকায় সুমনদের বাড়িতে দেখা যায়, বাড়িতে স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়। কয়েকজন সুমনের মা-বাবাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। কয়েকজন হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
এ সময় সুমনের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সাত দিন ধইরা বাবার (সুমন) লাইগা অপেক্ষা করতাছি। বাবা যে আর আসে না। বাবারে খুন কইরা ওরা আমার বুকটারে এক্কেবারে ঝাঁজরা কইরা দিছে। আমার বাবারে যারা খুন করছে, আল্লাহ তুমি ওগরে ফাঁসি দাও।’
আজ দুপুরে জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে সুমনের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক হুমায়ূন আহমেদ নূর সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, নিহত সুমনের লাশের মাথা, গলা, বুকে ও জননাঙ্গে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তার ঘাড়ও মটকানো ছিল। আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে সুমন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার তার সহপাঠী রবিন মিয়া (১৯) আজ সন্ধ্যায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় শেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল মাহমুদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ হেল জাবের রাফি প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাতে পারেননি। জবানবন্দি শেষে আদালতের নির্দেশে আসামি রবিন মিয়াকে জামালপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুবায়দুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, কলেজছাত্র সুমন মিয়াকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সুমনের এক সহপাঠী কলেজছাত্রী, মেয়েটির বাবা ও রবিন মিয়া। প্রেমঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করে সুমনকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে আজ সন্ধ্যায় জানাজা শেষে বারাকপাড়া (নিমতলা) কবরস্থানে সুমনের লাশ দাফন করা হয়েছে।