শত বছরের পুরোনো দোকানের মিষ্টি আর পরোটা-ভাজির সুনাম

নারায়ণগঞ্জ আদি আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্পঞ্জের মিষ্টি
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ শহরের পুরোনো মিষ্টির দোকানগুলোর মধ্যে ‘আদি আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডার’ অন্যতম। ১০০ বছরের বেশি সময়ের ব্যবসা তাদের। মিষ্টিপ্রিয় মানুষের কাছে এই দোকানের কাঁচা গোল্লা, রসগোল্লা, ক্ষীরের চপ, লালমোহন, প্যারার অনেক সুনাম। সেই সঙ্গে তাদের দোকানের পরোটা-ভাজিও মানুষ বেশ পছন্দ করেন। মিষ্টি আর পরোটা-ভাজির স্বাদ নিতে অনেকেই এখানে যান।

নারায়ণগঞ্জ শহরের গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা মধুসূদন মোদক শহরের কালীর বাজার এলাকায় ‘আদি আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডার’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৮ সালে বার্ধক্যের কারণে তিনি মারা যান। তাঁর পাঁচ ছেলের মধ্যে অরুণ কুমার মোদক মিষ্টির ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। বাকি চার ছেলে কলকাতায় থাকতেন, সেখানেই অসুস্থ হয়ে মারা যান। ২০১৬ সালে অরুণ কুমার মোদক মারা গেলে তাঁর ছেলে মলয় কুমার মোদক এখন মিষ্টির ব্যবসা দেখভাল করেন। শহরের কালীর বাজারে ‘আদি আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডার’ ছাড়াও শহরের চাষাঢ়া সান্ত্বনা মার্কেটে ‘আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডার’ নামের তাদের একটি শাখা আছে।

মলয় কুমার মোদক বলেন, শুরুতে তাঁর দাদা মধুসূদন মোদক ছানার আমৃতি, রসগোল্লা, দই, লুচি, পরোটা, হালুয়া ও ভাজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। পরে মিষ্টির আরও নানা পদ যুক্ত হয়। প্রতিদিন এখানে দেড় বস্তা ময়দার পরোটা তৈরি হয়। পাঁচ ধরনের সবজি দিয়ে করা হয় ভাজি। পাঁচফোড়ন দিয়ে সেই ভাজি সম্ভার দেওয়া হয় বলে স্বাদটা অন্য রকম হয়, গ্রাহকেরা খুব পছন্দ করেন।

এ কথার সত্যতা পাওয়া গেল কবি ও সাংবাদিক আফজাল হোসেনের কথায়। তিনি বলেন, তাদের পরোটা-ভাজির স্বাদ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। বহু বছর ধরে তারা এই স্বাদ ধরে রেখেছে, নষ্ট হয়নি।

দোকানে মিষ্টি বানানোর জন্য দুধ সংগ্রহ করা হয় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোপচর, বক্তাবলী ও সাপের চর এবং মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে। প্রতিদিন সকালে দুধ সংগ্রহ করে আনার পর সেই দুধ আগুনে জ্বাল দিয়ে মিষ্টি ও দই তৈরি করা হয়। প্রতিদিন ২০ মণ দুধ দিয়ে এখানে দই ও মিষ্টি হয়। মলয় মোদক জানান, তাঁদের দোকানে দইয়ের হাঁড়ি এক কেজি ২৫০ টাকা ও দুই কেজি ৫০০ টাকা। কেজিতে কাঁচা গোল্লা ৮০০ টাকা, রসগোল্লা ৩৫০ টাকা, লালমোহন ৩৮০ টাকা, চমচম ৩৫০ টাকা, কালো জাম ৩৮০ টাকা, ছানা ৮০০ টাকা, বরফি ৮০০ টাকা, গুড়ের সন্দেশ ৮০০ টাকা, ক্ষীর গুলি ৮০০ টাকা, সাদা চমচম ৪০০ টাকা, স্পঞ্জের মিষ্টি কেজি ৬০০ টাকা, প্যারা ৮০০ টাকা, রসমালাই ৪৪০ টাকা।

নারায়ণগঞ্জের আদি আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডারের ক্ষীর গুলি

ছোটবেলায় এখানে দাদার সঙ্গে মিষ্টি কিনতে আসতেন বলে জানালেন দন্তচিকিৎসক মাজহারুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেই পুরোনো দোকান, পানির পিতলের মটকা; আগের মতোই আছে।’

দোকানে ৬০ বছর ধরে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছেন নির্মল চন্দ্র পাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগে মাটির হাঁড়ি ও কাঁঠালের পাতায় মিষ্টি বিক্রি করেছেন। এখন কাগজের ঠোঙায় মিষ্টি বিক্রি করেন। আগের মিষ্টিতে শিরার প্রচলন বেশি ছিল। এখন মানুষ রস ছাড়া মিষ্টি বেশি পছন্দ করেন।