১৮টি বাস আটকে রেখেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে
১৮টি বাস আটকে রেখেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

‘বিতণ্ডার জেরে’ দুই পরিবহনের ১৮টি বাস আটকে রেখেছে ছাত্রলীগ

বাসের চালক ও সহকারীদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে দুটি পরিবহনের ১৮টি বাস আটকে রেখেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটকের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচাগামী লেনে বাসগুলো আটক করে রাখা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত বাসগুলো সেখানেই ছিল।

আজ বিকেল পাঁচটার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মৌমিতা ও বৈশাখী পরিবহনের বাসগুলো রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা জয় বাংলা ফটকে থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাসের চাবিগুলো নিয়ে নিচ্ছেন। আরিচাগামী লেনে মৌমিতা পরিবহনের পাঁচটি বাস এবং বৈশাখী পরিবহনের ১৩টি বাস আটক করে রাখা হয়েছে।

শহীদ রফিক-জব্বার হলের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের কর্মী নিশাত সিদ্দিকী বলেন, তিনি মহাখালী থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। পুরো রাস্তায় বৈশাখী পরিবহনের ওই চালক ধীরে ধীরে যাচ্ছিলেন এবং যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠাচ্ছিলেন। তিনি যত্রতত্র গাড়ি না থামিয়ে একটু দ্রুত যেতে বলে। একপর্যায়ে চালক তাঁকে গালাগাল শুরু করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দেওয়ার পর গাড়ির চালক এবং সহকারী ক্যাম্পাস নিয়েও বাজে মন্তব্য করেন। একপর্যায়ে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ালে চালক তাঁকে সাভারে গিয়ে মারধরের হুমকি দেন। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে তিনি হলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাস আটকিয়েছেন। মালিকপক্ষ ওই নির্দিষ্ট বাসের চালকদের নিয়ে এলে বাস ছেড়ে দেবেন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিশাত সিদ্দিকীর নেতৃত্বে বৈশাখী পরিবহনের বাস আটকানো শুরু করলে শহীদ রফিক-জব্বার হলের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি জুবায়ের আহমেদ সেখানে আসেন। তিনি দাবি করেন, মৌমিতা পরিবহনের একটি বাসের লোকজন তাঁর সঙ্গে বেয়াদবি করেছেন। তাঁর কথামতো ওই হলের জুনিয়র শিক্ষার্থীরা মৌমিতা পরিবহনের বাসও আটকানো শুরু করেন। তবে জুবায়েরের কথার সঙ্গে মৌমিতার বাসের ঘটনার কোনো সত্যতা নেই বলে মনে করছেন তাঁরা।

১৮টি বাস আটকে রেখেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহীদ রফিক-জব্বার হলের এক ছাত্রলীগের নেতা বলেন, জুবায়ের আহমেদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে আগেই। তিনি হলে নিয়মিত থাকেন না। সাভার এলাকায় ভাড়া থাকেন। তবে ক্যাম্পাসের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন।
জানতে চাইলে জুবায়ের আহমেদ বলেন, শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে মৌমিতা পরিবহনে করে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন তিনি। হাফ ভাড়া দিতে চাইলে বাসের সহযোগী সেটি নেননি। পরে তিনি ফুল ভাড়া পরিশোধ করেন। তবে বাসটি সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার ফুলবাড়িয়া নামক জায়গায় এলে আর যাবে না বলে জানায়। এ সময় ওই বাসের সহযোগীর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ তাঁর।

এ বিষয়ে বৈশাখী পরিবহনের একজন চালক মো. সেলিম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বলছে বৈশাখী পরিবহনের কোনো বাস তাদের এক ছাত্রের সঙ্গে ঝামেলা করেছে। তাই তারা আমাদের বাসগুলো আটক করেছে। বাস আটকের কথা মালিকপক্ষকে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তা রাসেল মিয়া স্বাধীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়বাংলা ফটকে বাস আটকের বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এর আগে গত বছরের ১৩ অক্টোবর এক কর্মী বাসে উঠতে গেলে তাঁকে উঠতে না দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগে সেলফি পরিবহনের ২০টি বাস আটক করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করে বাসগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়।