মৌলভীবাজারের প্রধান চারটি নদ-নদীর মধ্যে তিনটির পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। এর মধ্যে মনু নদের পানি রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। তবে মৌলভীবাজার শহরের কাছে মনু নদের পানি কিছুটা কমলেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। অপর দিকে ধলাই নদের পানি বিপৎসীমার অনেকটা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে রাজনগরে মনু নদের একাধিক ভাঙনে বন্যাকবলিত এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। নিচের দিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয় আজ শুক্রবার দুপুর ১২টায় নদ-নদীর পানির তথ্য-উপাত্তে জানিয়েছে, মনু নদের পানি রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছে। অপর দিকে মনু নদের চাঁদনীঘাটে পানি ১১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদী শেরপুরে ১১ সেন্টিমিটার এবং জুড়ী নদী ভবানীপুরে ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে কমলগঞ্জে ধলাই নদের পানি অনেকটাই কমে গেছে। ধলাই রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপৎসীমার ১০৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর শেরপুরে পানি কিছুটা বাড়ছে। অন্য সব নদ-নদীতে কমছে।
শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে মৌলভীবাজার-শমসেরনগর সড়কের মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মাতারকাপন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মাতারকাপন এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মৌলভীবাজার-শমসেরনগর সড়কের মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল থেকে মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারে কমবেশি পানিতে তলিয়ে আছে। হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি ঠেলে লোকজন চলাচল করছেন। মাতারকাপন এলাকার প্রায় সব বাড়িঘরেই পানি উঠেছে। অনেকে ঘর ছেড়ে পরিচিত ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। মৌলভীবাজার-শমসেরনগর সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। ফলে মৌলভীবাজার-শমসেরনগর সড়ক দিয়ে জেলা সদরের সঙ্গে কমলগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
মাতারকাপনে অবস্থিত রেডিও পল্লীকণ্ঠের স্টেশন আঙিনায় পানি ঢুকতে দেখা গেছে। রেডিও পল্লীকণ্ঠের জ্যেষ্ঠ স্টেশন ম্যানেজার মো. মেহেদি হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাতেও সড়ক ভাসমান ছিল। সকালেও সড়কের অনেক স্থান শুকনা ছিল। দেখতে দেখতে অনেক স্থানে পানি উঠে গেছে। স্টেশনের আঙিনাতেও পানি।’
মাতারকাপন গ্রামের বাসিন্দা বিপুল দাস বলেন, ‘গতকাল বিকেল থেকে পানি বাড়ছে। রোড (মৌলভীবাজার-শমসেরনগর সড়ক) বন্ধ হয়ে গেছে। মাতারকাপন গ্রামের অনেক মানুষের বাড়িতে পানি। অনেকে উঁচু এলাকার পরিচিতজনের বাড়িতে গিয়ে উঠছেন।’ তিনি বলেন, ‘এদিকে ধলাই নদের পানি নেমে এসেছে। এই পানি ছড়া (খাল) দিয়ে মনু নদে গিয়ে পড়ার কথা। কিন্তু মনুর পানি ওপরে থাকায় এই এলাকার পানি সরতে পারছে না।’
অপর দিকে মনু নদের ভাঙনে তলিয়ে যাওয়া মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের কদমহাটা এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। সড়কের রাজনগর কলেজ এলাকায় শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পানি ছিল। সড়কের এই অংশে (কলেজ এলাকা) সতর্কতার সঙ্গে যানবাহন চলাচল করছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে রাজনগর সদর ইউনিয়নের ময়নার দোকান এলাকায় মাছ ধরতে নেমে হৃদয় মিয়া (২২) নামে এক যুবক পানির তোড়ে ভেসে নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি উপজেলার মেদেনিমহল গ্রামের ছনাওর মিয়ার ছেলে। এ সময় তাঁর বাবাও সেখানে ছিলেন। সিলেট থেকে ফায়ার ব্রিগেডের একটি ডুবুরি দল শুক্রবার সকাল ছয়টায় ঘটনাস্থলে এসে নিখোঁজ যুবকের খোঁজ শুরু করে।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাসাতেও কোমরসমান পানি হয়েছে। এক-দুই ইঞ্চি পানি কমেছে। এখনো উপজেলা সদরে পানি আছে। কারেন্ট নেই। এখন বন্যার পানি হাওরে (কাউয়াদীঘি হাওর) জমা হচ্ছে। হাওরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।’
পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদ-নদীর পানি কমছে। এতে নদীতে পানির চাপ কমছে। রাজনগরে ভাঙন দিয়ে পানি বের হলেও পানির গতি আগের মতো নেই। গতি কমে আসছে। উজানে বৃষ্টিপাত নেই। আমাদের কাছে যেটুকু তথ্য আসছে, তাতে ভারতের কৈলাশহরেও পানি কমছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতির ভালোই উন্নতি হবে আশা করছি।’