সিলেট বিভাগের ৩ জেলায় বিএনপির ১৩ জন নেতা প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় সাতজন, সুনামগঞ্জের শাল্লায় তিনজন ও দিরাইয়ে দুজন এবং মৌলভীবাজারের বড়লেখায় একজন প্রার্থী রয়েছেন। গতকাল বুধবার যাচাই-বাছাই শেষে বৈধ প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ গত সোমবার রাতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানায়। দলটির সিলেট বিভাগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। তাই দলের নেতাদের সবাই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন। এরপরও কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে সিলেটের সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ ও গোলাপগঞ্জ; সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা; মৌলভীবাজারের জুড়ি, কুলাউড়া ও বড়লেখা এবং হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলায় প্রথম ধাপে নির্বাচন হচ্ছে। এ ১১ উপজেলায় প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ এপ্রিল, ভোট হবে আগামী ৮ মে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একমাত্র হবিগঞ্জ জেলায় বিএনপির কোনো নেতা প্রার্থী হননি। সবচেয়ে বেশি প্রার্থী হয়েছেন সিলেট জেলায়। তবে এখানে চার উপজেলার মধ্যে তিনটিতে কেউ প্রার্থী হননি। একমাত্র বিশ্বনাথ উপজেলাতেই প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাত নেতা। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আছেন চারজন। অন্যদের মধ্যে দুজন ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়াইয়ে আছেন একজন।
বিশ্বনাথে চেয়ারম্যান পদে যে চার বিএনপি নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন, তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সুহেল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপি নেতা সফিক উদ্দিন। তাঁদের মধ্যে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সুহেল আহমদ চৌধুরী দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তাঁর বহিষ্কারাদেশ এখন পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হয়নি।
প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কাওছার খান এবং খাজাঞ্চী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রব। তবে গতকাল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে ঋণখেলাপির দায়ে আবদুর রবের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এ ছাড়া উপজেলাটিতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন উপজেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বেগম স্বপ্না শাহীন।
সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলা বিএনপির সভাপতি গণেশ চন্দ্র দাস উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. সাইফুর রহমান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবদুল মজিদ প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া দিরাই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. গোলাপ মিয়া। এ ছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সহসভাপতি ছবি চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন।
মৌলভীবাজারে বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক রাহেনা বেগম হাছনা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের কাউকে প্রার্থী না হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। কেউ এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইলিয়াস আলীর ছবি ব্যবহার না করার অনুরোধ
বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির যেসব নেতা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের পক্ষে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে প্রচারকাজে যোগদান কিংবা সহযোগিতা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে উপজেলা বিএনপি। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গৌছ আলী ও সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপির সিদ্ধান্ত অবজ্ঞা করে যাঁরা প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করবেন কিংবা সহযোগিতা করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয় ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা বিবৃতিতে বলেন, কিছু প্রার্থী অবৈধ সরকারের পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর ছবি পোস্টার, লিফলেট, ফেস্টুনে ব্যবহার করছেন। এই অশুভ পাঁয়তারা যাঁরা করছেন, তা এখনই বন্ধ করতে হবে। অন্যায়, অপকর্ম ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীরা এটা কোনোভাবেই করতে পারেন না।