বিশ্বনাথ উপজেলায় নির্বাচন

‘স্বশিক্ষিত’ প্রার্থীর ছড়াছড়ি 

রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এ তথ্য জানা গেছে। আগামী ৮ মে উপজেলাটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১০ প্রার্থীর মধ্যে ৯ জনই মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে সাতজন প্রার্থী ‘স্বশিক্ষিত’। বাকি তিনজনের মধ্যে একজন স্নাতকোত্তর পাস। অপর দুজন অষ্টম ও দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য জানা গেছে। আগামী ৮ মে এই উপজেলায় ভোট হবে।

প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার এমন চিত্রে হতাশা প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে আইন প্রণয়নের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু কাজ হয়নি।’

হলফনামা ঘেঁটে দেখা যায়, প্রার্থীদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আকদ্দুছ আলী, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাব হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ এস আলী এনামুল হক চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেবুল মিয়া, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপি নেতা সফিক উদ্দিন ও যুক্তরাজ্য যুবলীগের সহসভাপতি শমসাদুর রহমান নিজেদের ‘স্বশিক্ষিত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের ডরসেট আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল রোসন ওরফে চেরাগ আলী অষ্টম শ্রেণি এবং জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। অপর প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমদ স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়েছেন।

হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি মামলার বিষয়টিও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে ছয়জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে কখনো কোনো মামলাই হয়নি। বাকিদের মধ্যে মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে হওয়া ১৪টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা এখনো বিচারাধীন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে একটা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে এবং আরেকটা মামলা উচ্চ আদালত স্থগিত রেখেছেন। অন্য তিন প্রার্থীর মধ্যে আলতাব হোসেনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হলেও তিনি খালাস পেয়েছেন। গিয়াস উদ্দিন আহমদ একটা মামলা থেকে খালাস এবং একটা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। অপর প্রার্থী গৌছ খানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা বিচারাধীন।

হলফনামায় দেখা যায়, প্রার্থীদের মধ্যে আলতাব হোসেন ছাড়া কারও কোনো দেনা নেই। তাঁর সাড়ে তিন লাখ টাকার ব্যাংকঋণ আছে। এ ছাড়া ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫ জনই ব্যবসায়ী। এর বাইরে একজন আইনজীবী এবং তিনজন কৃষিজীবী আছেন। একজন প্রার্থী পেশার বিষয়টি উল্লেখ করেননি।

আছেন কোটিপতি ও লাখপতি

প্রার্থীদের হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, কোটিপতি থেকে লাখপতি—সব ধরনের প্রার্থীই আছেন। প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী মো. আবদুল রোসন ওরফে চেরাগ আলী। পেশায় ব্যবসায়ী চেরাগ আলীর বার্ষিক আয় ৫ কোটি ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬৭৭ টাকা। তাঁর ৮১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ ও ১ কোটি ২২ লাখ ২৫০ টাকার স্থাবর সম্পদ আছে। তাঁর যৌথ মালিকানায় ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ আছে। 

এ ছাড়া চেরাগ আলীর স্ত্রীর আছে সর্বমোট ৩০ লাখ টাকার অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ। ব্যবসায়ী আলতাব হোসেনের বার্ষিক আয় ১ লাখ টাকা। তাঁর অস্থাবর সম্পদ ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার।