ফরিদপুরের মধুখালীতে বিএনপির এক পক্ষের ‘শান্তিমিছিলে’ আরেক পক্ষের হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বুধবার বেলা দুইটার দিকে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের দিঘলিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বহরের বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। আহত হন অন্তত ১০ জন।
বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়ার নেতৃত্বে এ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ তিন শতাধিক গাড়ি ছিল। ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের অনুসারী নেতা–কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শামসুদ্দিন মিয়া।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মোটর শোভাযাত্রাটি বোয়ালমারী উপজেলা সদর থেকে শুরু হয়ে আলফাডাঙ্গা হয়ে মধুখালী উপজেলার দিকে যাচ্ছিল। পথে দিঘলিয়া এলাকায় পৌঁছালে হামলার ঘটনা ঘটে। শতাধিক হামলাকারী লাঠি ও দেশি অস্ত্র নিয়ে বহরের গাড়িতে হামলা চালান। এ সময় শামসুদ্দিন মিয়াকে বহনকারী মাইক্রোবাসসহ অন্তত চার-পাঁচটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়।
এ হামলার পর গাড়িবহরের লোকজন বোয়ালমারী ফিরে আসেন। পরে বিকেল চারটার দিকে শামসুদ্দিন মিয়ার সমর্থকেরা সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক বোয়ালমারী পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহার কার্যালয়ে হামলা চালান। এ হামলায় সঞ্জয় সাহা ও তাঁর দুই ছেলে সজীব সাহা ও রাজীব সাহা আহত হন। সঞ্জয় সাহাকে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর দুই ছেলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে ঘটনাস্থলে এসে সেনাবাহিনী দুজনকে আটক করে নিয়ে যায়। তবে তাঁদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির মনোনয়নে ফরিদপুর–১ আসন থেকে একবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন খন্দকার নাসিরুল। ওই আসন থেকে একাধিকার সংসদ সদস্য হন শাহ মো. আবু জাফর। ওই সময় থেকে শাহ জাফরের সঙ্গে খন্দকার নাসিরুলের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শাহ জাফর বিএনপি ছেড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ভাইস চেয়ারম্যান হন।
এ প্রেক্ষাপটে বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. শামসুদ্দিন মিয়া ফরিদপুর-১ আসনের একজন সম্ভাব্য প্রার্থী তা জানান দিতেই মোটর শোভাযাত্রার আয়োজন করেন। এর আগে ৭ আগস্ট খন্দকার নাসিরুল ওই সংসদীয় এলাকায় শান্তি শোভাযাত্রার নামে মোটর শোভাযাত্রা বের করেন।
মো. শামসুদ্দিন মিয়া বলেন, কয়েক শ মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসের শোভাযাত্রাটি মধুখালীর দিঘলিয়া বাজার এলাকায় এলে লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থকেরা হামলা চালান। হামলাকারীরা তাঁকে (শামসুদ্দিন মিয়া) বহন করা মাইক্রোবাসটিও ভাঙচুর করেন। এতে অন্তত ১০ নেতা–কর্মী আহত হন। তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে খন্দকার নাসিরুল এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ তাঁর।
তবে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময় তিনি ফরিদপুর শহরে ছিলেন। তাঁর লোকজনও ওখানে যাননি। তবে তিনি শামসুদ্দিন মিয়া গাড়িবহরে হামলার খবর শুনেছেন। নিজেদের মধ্যে খাবার নিয়ে নিজেরা মারামারি করেছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার বিষয়ে খন্দকার নাসিরুল বলেন, ‘আমার লোকজন হামলা করেছে এ দাবি করা গেলে ‘জাতে ওঠা যায়’ এ জন্যই হয়তো শামসুদ্দিন মিয়া আমার নাম ব্যবহার করেছেন।’
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, তিনি শুনেছেন দিঘলিয়াতে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। তবে তিনি বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে যাননি। গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন।
বোয়ালমারী থানার ওসি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বোয়ালমারীতে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। এ সময় চার-পাঁচজন সামান্য আহত হয়েছেন বলে শুনেছেন।