সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তাঁর আপন ছোট ভাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ছবি যুক্ত করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। এতে নকশা পরিবর্তনের পেছনে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে সংগঠনটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বলা হয়, ম্যুরালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি থাকার কথা থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে সংসদ সদস্য ও তাঁর ভাইয়ের ছবি বসানো হয়েছে।
এর প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গবন্ধুর এই ম্যুরাল থেকে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ছবি সাত দিনের মধ্যে অপসারণ করতে ইউএনওর কাছে স্মারকলিপি দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাজেদা আহমেদ।
সাজেদা আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। ম্যুরাল থেকে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ছবি অপসারণ করাসহ বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে যাঁরা অবমাননা ও হেয়প্রতিপন্ন করেছেন, তাঁদের শাস্তির দাবি জানিয়ে আমি স্মারকলিপি দিয়েছি।’
এলজিইডির ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলার প্রশাসনিক ভবনের প্রস্তাবিত এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ থেকে ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭২৪ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কোটেশনের মাধ্যমে কাজটি পায় মেসার্স রানা ট্রেডার্স নামে ধর্মপাশার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তৎকালীন ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলী আরিফ উল্লাহ খান ৩০ দিনের মধ্যে এই ম্যুরাল নির্মাণকাজ শেষ করার সময় বেঁধে দিয়ে গত ২৩ জুন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেন।
ম্যুরালের নকশার এক পাশে বঙ্গবন্ধু ও আরেক পাশে কেবল শেখ হাসিনার ছবি থাকার কথা। কিন্তু সেখানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কোনো রকম অনুমতি ছাড়াই সুনামগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতন ও তাঁর আপন ছোট ভাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকনের ছবি যুক্ত করা হয়েছে।
মেসার্স রানা ট্রেডার্সের ঠিকাদার ইজাজুর রহমান ওরফে রানা বলেন, ‘ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকন সাহেব আমার পূর্ব পরিচিত। তিনি আমার নামীয় লাইসেন্সটি দিয়ে এই কাজটি বাস্তবায়ন করে আসছেন।’
তবে মোজাম্মেল হোসেনের দাবি, ম্যুরাল নির্মাণকাজে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে নিজের ও ভাইয়ের ছবি যুক্ত করার যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলার ধারাবাহিতা বজায় রাখতেই হয়তোবা এমনটি করা হয়েছে। ম্যুরাল নির্মাণকাজটি যেহেতু নির্মাণাধীন, তাই কাজটি শেষ হওয়ার আগে এ নিয়ে কারও বাজে মন্তব্য করা ঠিক নয়।
মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ সরকার বলেন, ‘বিধি লঙ্ঘন করে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা এ নিয়ে আগামী দিনে কঠিন কর্মসূচির ঘোষণা দেব।’
মধ্যনগরের ইউএনও নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘কাজটি বাস্তবায়ন আমার উপজেলা থেকে হচ্ছে না। তাই স্মারকলিপিটি ধর্মপাশার ইউএনও স্যারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এটির অনুলিপি ডিসি স্যারের কাছেও পাঠিয়েছি।’
এ বিষয়ে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি নকশা মোতাবেক না করে বিধি লঙ্ঘন করে করা হয়ে থাকলে সেটি সঠিকভাবে করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।