কারাগার
কারাগার

বগুড়ায় শ্রমিক দলের নেতা হত্যা মামলায় সরকারি কৌঁসুলি কারাগারে

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বগুড়ার গাবতলী পৌরসভা শ্রমিক দলের সহসভাপতি জিল্লুর সরদার হত্যা মামলায় বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (সরকারি কৌঁসুলি) আশেকুর রহমান সুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে আশেকুর রহমানের পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। আদালতের বিচারক এ এস এম তাসকিনুল হক জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বগুড়ার আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গাবতলী পৌর শ্রমিক দলের সহসভাপতি জিল্লুর সরদার হত্যা মামলার ১৫৭ জন আসামির মধ্যে আশেকুর রহমান ৫২ নম্বর আসামি। তিনি হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছিলেন। হাইকোর্টের নির্দেশে আজ বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিনি জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

নিহত শ্রমিক দলের নেতা জিল্লুর সরদারের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার গোড়দহ উত্তরপাড়া গ্রামে। জিল্লুরকে হত্যার অভিযোগে গত ২৪ আগস্ট বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন তাঁর স্ত্রী খাদিজা বেগম। মামলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ ১৫৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৪০০ জনকে। মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন মন্ত্রী, পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ও দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যার ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট দুপুরে বগুড়া শহরের প্রধান সড়কে ঝাউতলা এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারীদের ওপর রিভলবার, পিস্তল, বন্দুক ও আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। এ সময় ককটেল ও পেট্রলবোমা হামলাও হয়। ছাত্র-জনতার মিছিলে ছিলেন শ্রমিক দলের নেতা জিল্লুর সরদার। হামলায় ছাত্র-জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে দৌড়াতে থাকলে জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে জিল্লুর সরদারকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। গুলি জিল্লুরের বুকে লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গাবতলী উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি রায় তাঁর হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে জিল্লুরকে গুলি করেন। পরে স্থানীয় লোকজন জিল্লুরকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর রশিদ ও বিপ্লব কুমার, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক কাহার আকন্দ, সাবেক এএসপি ফজলুল হক, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান, এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক সফিউল্লাহ, জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নাটোরের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম, বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান, বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান, বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা আলম, রেজাউল করিম বাবলু ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য অপু উকিল।