ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসন থেকে ১৪–দলীয় জোটের প্রাথী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি পাকাপাকি হয়ে গেল। এই আসনে আওয়ামী লীগ আগে সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুসকে মনোনয়ন দিয়েছিল।
রাশেদ খান মেননকে গত বুধবার বরিশাল-৩ আসনে ১৪ দল জোটের প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে গত শুক্রবার তা পরিবর্তন করে তাঁকে বরিশার-২ আসনে ১৪–দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। রাশেদ খান মেনন ২৮ বছর পর নিজ জন্মস্থানে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
এ নিয়ে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নানা জল্পনা ও আলোচনা ছিল তিনি আসলে কোন আসনে প্রার্থী হবেন। আজ রোববার দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বরিশালের জেলা প্রশাসক মহিদুল ইসলামের কাছে বরিশার-৩ আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার আবদেন তুলে দেওয়ার পর সেই জল্পনার অবসান হলো।
এর আগে রাশেদ খান মেনন গতকাল শনিবার বিকেলে সড়কপথে ঢাকা থেকে নির্বাচনী এলাকা উজিরপুরের ইসলাদী বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছালে ওয়ার্কার্স পার্টি উজিরপুর ও বানড়ীপাড়া উপজেলার নেতা-কর্মী, ১৪ দলের শরিক জাসদ আওয়ামী লীগসহ সর্বস্তরের জনগণ মেননকে ফুলেল সংবর্ধনা দেন।
আজ সকালে রাশেদ খান মেনন বরিশাল নগরে আসেন। নগরের কাউনিয়ার নীলু-মনু ট্রাস্ট ও পাবলিক লাইব্রেরিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভায় যোগ দেন। এর আগে তিনি শুরুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বর্ষীয়ান নেতা বলেন, ‘শুরু থেকেই আমি বলে এসেছি, পার্লামেন্টের শেষ অধিবেশনের আগেও আমি বলেছি যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য আমাদের নির্বাচন নয়। তারা দেশের মধ্যে এবং ভূখণ্ডের বাইরে বঙ্গোপসাগরে ঘাঁটি স্থাপন নিয়ে বহুদিন ধরে চাপাচাপি করছে। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে না পেরে তারা রেজিম চেয়ে শাসন পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। সেই জায়গা থেকে এই নির্বাচনকে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সফল করার দায়িত্ব আমাদের সবার রয়েছে। আর তাই এই নির্বাচনে দৃঢ়তার সঙ্গে ভূমিকা রেখে চলছে ওয়ার্কার্স পার্টি।’
মেনন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শরিক দল হিসেবে ১৪ দলে আমরা আছি। আমরা বহুদিন ধরে একত্রে আন্দোলন, নির্বাচন, সরকার ইত্যাদি পরিচালনা করছি। এখনো আমরা আশা করি, ঐক্যবদ্ধভাবে এগোবো। আসন বণ্টন নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল, এখনো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। গত সংসদে আমরা পাঁচটি আসনে নির্বাচন করেছিলাম। দুটি আসনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার পরও হেরে গিয়েছিল। কী কারণে হয়েছিল, আপনারা বরিশালবাসী ভালো জানেন এবং তিনটি আসনে আমরা জয়ী হয়েছিলাম। তারপরও আমাদের প্রত্যাশা ছিল ন্যূনতম সাতটি আসনে আমরা ছাড় পাব। কিন্তু জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ ও ভূমিকার কারণে আমাদের আসন সংখ্যা কমে গেছে বলে তাঁরা আমাদের জানিয়েছে।’
বরিশালের তাঁর মনোনয়নের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে মেনন বলেন, ‘আমরা রাজশাহী-২, সাতক্ষীরা-১ ও বরিশাল-২ নিয়ে তিনটি আসন পেয়েছি। বরিশালের আসন নিয়েও একটা কনফিউশন সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ, তারা আমাকে প্রথমে বরিশাল-৩ এ দিয়েছিল, তারপরে গত পরশু দিন রাত ৮টার সময় আমাকে জানানো হয় বরিশাল-৩ এর পরিবর্তে আমাকে বরিশাল-২ এ দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির কারণে আমাদের কর্মীদের মধ্যেও সমস্যা তৈরি হয়, প্রার্থীদের মধ্যেও সমস্যা তৈরি হয়। তারপরও আমি এটা মেনে নিয়ে নির্বাচনে এসেছি।’
এবার নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি খুব আগ্রহী ছিলেন না উল্লেখ করে মেনন বলেন, ‘আমার বয়স হয়ে গেছে, আমি ৮০ বছর অতিক্রম করেছি এরই মধ্যে। সেদিক থেকে আমি ভেবেছিলাম এবার নির্বাচনে যাব না। কিন্তু আমার পার্টি কোনোভাবেই রাজি হয়নি। পরবর্তীকালে দেশের এবং জাতীয় পরিস্থিতি দেখে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমি বরিশালের সন্তান, বরিশালের বাইরে থেকেও আমি এখানকার উন্নয়ন ও বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে আগ্রহ বজায় রেখেছি। আমার স্ত্রীও সংরক্ষিত আসনের এমপি থাকা অবস্থায় এ অঞ্চলের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। বরিশাল তথা এলাকার সঙ্গে আমার সম্পর্ক সব সময় ছিল। আমি আশা করি, উজিরপুর-বানারীপাড়াবাসীসহ গোটা বরিশালের মানুষ আমাকে সহযোগিতা করবেন। বিশেষ করে বরিশালের সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে আমি সহযোগিতা চাই।’
এ সময় মেননের সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টি বরিশাল জেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জাম্মেল হকসহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতি রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি এই আসন থেকে ২০০৮ থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হন। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ এই আসনটিতে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে দলীয় মনোনয়ন দেয়। ফলে রাশেদ খান মেনন কোন আসনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন—এ নিয়ে সংকটের সৃষ্টি হয়। এরপর আকস্মিকভাবে বরিশাল-২ ও ৩ এই দুটি আসনে মনোনয়ন জমা দেন মেনন। এতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মনোনয়ন নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে জোটকেন্দ্রিক রাজনীতিতে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়।
রাশেদ খান মেননের জন্মস্থান বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায়। তিনি ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে বরিশাল-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান জাপা প্রার্থী গোলাম ফারুক অভির সঙ্গে। সে হিসাবে ২৮ বছর পর জন্মভূমি বরিশাল থেকে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ওই সময় এ আসনটি ছিল বাবুগঞ্জ-উজিরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। কিন্তু এখন আসনবিন্যাসের পর বরিশাল-২ আসনটি বানারীপাড়া-উজিরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। আর বাবুগঞ্জ উপজেলাটি চলে গেছে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের সঙ্গে।