মো. হারুনার রশিদ
মো. হারুনার রশিদ

হারুনার রশিদের নগদ টাকা ২৪৭ গুণ বেড়েছে

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মো. হারুনার রশিদ ওরফে হীরা পাঁচ বছর ধরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই পাঁচ বছরে তাঁর নগদ টাকা বেড়েছে প্রায় ২৪৭ গুণ। তবে ব্যবসা থেকে আয় অর্ধেকের বেশি কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ।

হারুনার রশিদ আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০১৯ সালে নির্বাচনে ও এবার নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে তাঁর নগদ ও ব্যাংকে জমাকৃত টাকার এই চিত্র পাওয়া গেছে।

হারুনার রশিদ ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি। ২০২২ সালের ২২ এপ্রিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো হয়নি। দুই সদস্যের কমিটি দিয়ে চলছে আওয়ামী লীগ। হারুনার রশিদ সাবেক কৃষিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই।

* হারুনার রশিদ সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই। * ব্যবসা থেকে তাঁর আয় অর্ধেকের বেশি কমেছে।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হারুনার রশিদ ২০১৯ সালে জমা দেওয়া হলফনামায় নগদ টাকা দেখিয়েছিলেন দুই লাখ। এবার হলফনামায় তাঁর নগদ টাকার পরিমাণ ৪ কোটি ৯৩ লাখ ২৪ হাজার ১২৬ টাকা। এটি তাঁর ব্যবসায়িক পুঁজি বলে উল্লেখ করেছেন। পাঁচ বছরে তাঁর নগদ টাকা বেড়েছে ২৪৬ দশমিক ৬২ গুণ।

এই পাঁচ বছরে হারুনার রশিদের ব্যবসা থেকে আয় অর্ধেকের বেশি কমেছে। ২০১৯ সালে দেওয়া হলফনামায় ব্যবসা থেকে ২ কোটি ১৪ লাখ ৩ হাজার ২৭৬ টাকা আয়ের তথ্য দিয়েছিলেন। এবার তিনি ব্যবসা থেকে আয় করেছেন ১ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার ৩৫৪ টাকা।

পাঁচ বছর আগে তাঁর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৩৫ হাজার ৭৭৪ টাকা জমা ছিল। এবার তাঁর জমাকৃত টাকা কমেছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৪৭ লাখ ৮৯ হাজার ২৬৩ টাকা জমা রয়েছে।

হারুনার রশিদের পাঁচ বছর আগে একটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের ট্রাক ও ১০ লাখ টাকা মূল্যের ব্যক্তিগত গাড়ি ছিল। এবার হলফনামায় দেখা যায়, তাঁর ট্রাক নেই। তবে ৫১ লাখ ৬১ হাজার টাকা মূল্যের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে।

২০১৯ সালের হলফনামায় তিনি ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিকসামগ্রী, ৫০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাব এবং স্ত্রীর নামে ৩০ ভরি স্বর্ণ আছে বলে তথ্য দিয়েছিলেন। পাঁচ বছরে এগুলোর পরিমাণ বাড়েনি। এবারও একই তথ্য দিয়েছেন।

স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ২০১৯ সালে উল্লেখ করেছিলেন পৈতৃক সূত্রে পাওয়া চার একর কৃষিজমি। পাঁচ বছরে তা বাড়েনি। ৬০ দশমিক ২০ শতাংশ অকৃষিজমি ছিল। এবার জমি কমে হয়েছে ৪৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ ছাড়া ঢাকা, ময়মনসিংহ ও ধনবাড়ীতে চারটি দালান রয়েছে তাঁর। ২০১৯ সালের হলফনামায় অর্জনকালীন মূল্য দেখানো হয়েছিল ১ কোটি ৮৮ লাখ ৫১ হাজার ২৩৬ টাকা। এবার হলফনামায় ওই চার দালানের অর্জনকালীন মূল্য দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত বসতবাড়ি ও চারটি অ্যাপার্টমেন্টের তথ্য ২০১৯ সালের হলফনামায় ছিল। ওই হলফনামায় ফ্ল্যাট বাবদ রাজউককে ৫৯ লাখ ২৫ হাজার ২৫০ টাকা দেওয়ার তথ্য ছিল। এবার এই অ্যাপার্টমেন্ট চারটির মূল্য ১ কোটি ৭০ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৬ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

হারুনার রশিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসএস। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁর নামে বর্তমানে কোনো মামলা নেই। অতীতেও কোনো মামলা ছিল না। তাঁর পেশা ইটভাটামালিক ও কৃষি।

এ উপজেলায় হারুনার রশিদ ছাড়াও আরও চারজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদুল ওয়াদুত তালুকদার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মেহেদী হাসান ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল আজিজ।