লোডশেডিং
লোডশেডিং

বরিশালে গ্রামে অসহনীয় লোডশেডিং, কর্তৃপক্ষের দাবি, বিদ্যুতের ঘাটতি নেই

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের সময় বরিশালের গ্রামগুলোতে ১৫ দিনের বেশি একটানা বিদ্যুৎ ছিল না। শহরগুলোও ছিল অন্তত ৪৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন। এরপর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। বিশেষ করে গ্রামের মানুষ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ। গ্রামের বাসিন্দাদের ভাষ্য, অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে লোডশেডিং। ভ্যাপসা গরমে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তাঁরা।

তবে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিদ্যুতের কোনো প্রকার ঘাটতি নেই। যেহেতু ঘাটতি নেই, তাই লোডশেডিং থাকারও কথা নয়।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি এলাকার বিদ্যুতের গ্রাহক মো. সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, রাতের অর্ধেকটা সময় বিদ্যুৎ থাকে না। দিনেও একই অবস্থা। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে এক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। ভ্যাপসা গরমে কষ্টের শেষ নেই তাঁদের। তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় একটানা ১৫ দিন বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন ছিল। এরপর বিদ্যুৎ সচল হলেও অবস্থার উন্নতি দেখা যাচ্ছে না।

বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা (ওজোপাডিকো)। এ প্রতিষ্ঠানের আওতায় বিভাগের ছয়টি জেলায় বিদ্যুতের গ্রাহক আছেন ৪ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে বরিশাল নগরে গ্রাহকের সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার। উপজেলা সদর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। পবিসের পাঁচটি সমিতির আওতায় গ্রাহক আছেন প্রায় ২১ লাখ ৬৫ হাজার। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বরিশাল বিভাগের বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পিরোজপুর জেলায় প্রতিদিনের বিদ্যুৎ চাহিদা ৪৮০ মেগাওয়াট।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার দুপুরে ওজোপাডিকো বরিশাল অঞ্চলের পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের চাহিদা ১১৮ মেগাওয়াট। সেখানে চাহিদার তুলনায় দুই দিন ধরে পুরোটাই পাওয়া যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার কিছুটা ঘাটতি ছিল। ফলে ওই দিন লোডশেডিং হতে পারে। কিন্তু গত দুই দিনে লোডশেডিং হওয়ার কথা নয়। হয়তো লাইন মেরামতের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে।’

বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভরপাশা এলাকার বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁরা বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকার কাছাকাছি থাকেন। তাই একটু সুবিধা পান। এরপরও দিন-রাত মিলিয়ে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।

বাকেরগঞ্জ উপজেলাটি বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর আওতায়। এই সমিতির মহাব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। এখন সরবরাহ লাইনের কাজ করতে গিয়ে হয়তো কোনো এলাকার লাইন বন্ধ রাখা হয়। এতে হয়তো ওই এলাকার লোকজন বিদ্যুৎ পান না। এমনটাই হতে পারে।’

শুধু বাকেরগঞ্জ নয়, অন্য এলাকার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকেরাও বিদ্যুতের ভোগান্তির কথা জানান। বরগুনা সদর উপজেলার হগাজারবিঘা গ্রামের গ্রাহক নুরুল হক বলেন, আগে দিন-রাত মিলিয়ে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দিন-রাত মিলিয়ে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফোন দিলেও সাড়া পাওয়া যায় না। কী যে দুর্ভোগে আছেন, তা বলে শেষ করা যাবে না।

বরগুনার পাথরঘাটা পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও পাথরঘাটা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি পৌর এলাকার বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও আমার বাড়ির বিদ্যুৎ–সংযোগটি বাদুরতলা গ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত। ২৪ ঘণ্টায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ভোগান্তির যেন শেষ নেই।’

পাথরঘাটার রায়হানপুর ইউনিয়নের লেমুয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ওষুধ ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, আগের চেয়ে ২-৩ দিনে বিদ্যুতের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো দিনে–রাতে লেমুয়া এলাকায় ৬ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না।

বরিশালের শহর এলাকাতেও লোডশেডিং আছে। তবে গ্রামের তুলনায় অনেক কম। নগরের অক্সফোর্ড এলাকার বাসিন্দা এহসানুল হক বলেন, বুধবার দিনে ও রাতে দুইবার ঘণ্টাখানেক বিদ্যুৎ ছিল না। নগরের উত্তর আলেকান্দা এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রাতে পৌনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। বুধবার রাতে আধা ঘণ্টা ও বৃহস্পতিবার সকালে এক দফায় অন্তত ২০ মিনিট লোডশেডিং ছিল।

গত ২৬ জুন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) পরিচালনাধীন পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার দুটি ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিটের যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হলে এ অঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং দেখা দেয়। দ্রুত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষ করে ১ জুলাই ওই ইউনিট উৎপাদনে ফেরে। এরপর বিদ্যুতের ঘাটতি লাঘব হয়ে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়।

বিদ্যুৎ বিতরণের কাজে নিয়োজিত পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পাথরঘাটা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. আব্দুস সালাম বলেন, পাথরঘাটায় কোনো লোডশেডিং নেই। তবে লাইনে কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কাজ করতে হচ্ছে। এতে গ্রাহকদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

পাথরঘাটার চরদুয়ানী ইউনিয়নের ছোট টেংরা গ্রামের বাসিন্দা মো. সোহাগ মিয়া। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ১৯ দিন পর এলাকায় বিদ্যুৎ পেয়েছিলেন। বর্তমানে দিনে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুতের অবস্থা হযবরল। এ অবস্থা দেখার যেন কেউ নেই।