গাজীপুর সিটি নির্বাচন

ইভিএমে ভোট নিয়ে শঙ্কা-সন্দেহ প্রার্থীদের 

গাজীপুরে এর আগে ইভিএমে ভোট হয়নি। কোনো কোনো প্রার্থী বলছেন, ইভিএমে ভোটে ফল পরিবর্তনের সুযোগ থাকে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচন
গাজীপুর সিটি নির্বাচন

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে যেন শঙ্কা ও সন্দেহের শেষ নেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে। বাটন চাপলে ভোট কি আদৌ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে পড়বে, নাকি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইভিএম টেম্পারিং করা হবে, উঠছে এমন প্রশ্নও।

২৫ মে গাজীপুর সিটির ভোট। এই নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৩ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৭৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে ৩ হাজার ৪৯৭টি ভোটকক্ষে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে।

নির্বাচন নিয়ে গত বুধবার নগরের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার মিলনায়তনে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ সময় অনেক প্রার্থী ইভিএম নিয়ে শঙ্কা ও সন্দেহ প্রকাশ করেন।

শুনেছি, মেশিন থেকে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়া যায়। ভোট নিতেও অনেক সময় লাগে, তাই আমরা একটা ধাঁধার মধ্যে আছি।
মোন্তাজ আলী, কাউন্সিলর প্রার্থী, ২ নম্বর ওয়ার্ড

মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেন, গাজীপুরে ইভিএমে আগে ভোট হয়নি। এ কারণে অনেক প্রার্থী ও ভোটার ইভিএম সম্পর্কে অবগত নন। নির্বাচনের আগে প্রতিটি ওয়ার্ডে ইভিএম সম্পর্কে সচেতনতার জন্য প্রার্থী ও ভোটারদের অংশগ্রহণে ইভিএম প্রদর্শন এবং ডামি ভোট গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

ইভিএমে ভোট হলে ফল পরিবর্তন করার সুযোগ থাকে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান। গতকাল প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিগত কিছু নির্বাচনে দেখেছি প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা মেশিনের প্রিন্ট কপি না দিয়ে হাতে লিখে ফলাফল দেন। তখন ফলাফল পরিবর্তনের সুযোগ থাকে। এ ছাড়া বয়স্ক লোকদের হাতের ছাপ নিতে চায় না তখন ভিন্নভাবে ভোট দেওয়া হয়। এ ছাড়া কিছু নির্বাচনে দেখা গেছে ভোটারের নখের ছাপ নেওয়া হয়, আর গোপন কক্ষে অন্যজন ভোট দিয়ে দেন। এসব কারণেই ইভিএম নিয়ে শঙ্কা।

ইভিএম নিয়ে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ও সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইভিএমের যেসব মডার্ন ভার্সন আছে, সেটা আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত হয়নি। আমাদের দেশে যে ইভিএম, সেটা লাঙ্গলে প্রেসার দিলে লাঙ্গলই উঠল কি না, সেটা আপনি বুঝতে পারবেন না। যাঁরা প্রোগ্রামিং করেন, তাঁরা যে কেউ যেকোনোভাবেই এটা করতে পারেন। এ জন্য ইভিএমের প্রতি মানুষের শঙ্কাটা থাকে।’

ইভিএম নিয়ে শঙ্কা ও সন্দেহটা কাউন্সিলর প্রার্থীদের আরও বেশি। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোন্তাজ আলী বলেন, ‘শুনেছি, মেশিন থেকে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়া যায়। ভোট নিতেও অনেক সময় লাগে, তাই আমরা একটা ধাঁধার মধ্যে আছি।’

ইভিএম নিয়ে সব শঙ্কা ও সন্দেহের জবাব মতবিনিময় সভাতেই দিয়ে গেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ইভিএমের ভোট এক জায়গায় দিলে আরেক জায়গায় চলে যায়, এটি সত্য নয়। তাহলে সব জায়গায় সরকারি দলই জিতত। ইভিএমে হওয়া ভোটে রংপুরে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রথম হওয়া এবং সরকারি দলের প্রার্থীর চতুর্থ হওয়ার উদাহরণ দেন তিনি। ইভিএমে কীভাবে ভোট দিতে হয়, ভোটের আগে সে বিষয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে মক ভোটের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান আলমগীর।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গাজীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রথম আলোকে বলেন, ইভিএমটা হচ্ছে, গাজীপুর সিটির জন্য একেবারে অচেনা অধ্যায়। এখন পর্যন্ত নগরীর কেউ ইভিএমে ভোট দেননি। সাধারণ ভোটারদের কাছে আজব একটি মেশিন। তাই এটি নিয়ে ভোটারদের মধ্যে প্রচারণা করা প্রয়োজন। প্রার্থী ও ভোটারদের সংশয় দূর করা প্রয়োজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইভিএমকে সাধারণ ভোটারদের মধে৵ পরিচিত করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ইভিএমে ভোট দেওয়া নিয়ে প্রার্থীদের মতো দ্বিধা–দ্বন্দ্ব ও নানা সন্দেহে ভুগছেন বলে ভোটাররাও।