দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুরের প্রতিবাদে যশোরের অভয়নগরে নানা কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল মশিয়াহাটী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে
দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুরের প্রতিবাদে যশোরের অভয়নগরে নানা কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল মশিয়াহাটী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে

হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে যশোরে বিক্ষোভ সমাবেশ

সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি, উপাসনালয় ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের প্রতিবাদে যশোরের অভয়নগরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলার মশিয়াহাটী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে সমাবেশ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে মশিয়াহাটী আঞ্চলিক দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন কমিটি। এতে অভয়নগর ও মণিরামপুর উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত ৯৬ গ্রামের (৯৬ খান নামে পরিচিত) দুই সহস্রাধিক বাসিন্দা অংশ নেন।

গতকাল বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত সেখানে মানববন্ধন হয়। পরে এক প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে কর্মসূচির সমাপ্ত ঘটে। এতে সভাপতিত্ব করেন মণিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও মশিয়াহাটী আঞ্চলিক দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি শেখর চন্দ্র রায়।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর, মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো ‘তুমি কে তুমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘আমার দেশ সবার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘আমার ঘরে হামলা কেন, জবাব চাই, জবাব দাও’, ‘সনাতনীর ওপর আক্রমণ, মানি না মানব না’, ‘জাগো জাগো নিজে জাগো, নিজের জন্মস্থান নিজে রক্ষা করো’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি।

কর্মসূচিতে ব্যাপকসংখ্যক নারী অংশ নেন। তাঁরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা চেয়েছেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, যেভাবে হিন্দুদের ঘরবাড়ি, মন্দির, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হচ্ছে, তা দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত তাঁরা। সরকারের দায়িত্ব এসবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাঁরাও এ দেশের নাগরিক। এই দেশে তাঁদের নিরাপদে বাঁচার অধিকার আছে। কিন্তু আজ তাঁদের কোনো নিরাপত্তা নেই। তাঁরা আজ নিজ জন্মভূমিতে পরবাসী।

সমাবেশে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ যশোর জেলার সভাপতি দীপংকর দাস রতন বলেন, ‘কোনো সরকারই হিন্দু হত্যার বিচার করেনি। বিচার না করার কারণে আজ হিন্দুদের ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হচ্ছে। আমাদের নিজেদের অধিকার নিজেদেরই আদায় করে নিতে হবে। আমরা এ দেশের বাসিন্দা, কোনো অবস্থাতেই আমরা এ দেশ ত্যাগ করব না।’

সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘নিজেদের জানমাল আর সম্ভ্রম রক্ষায় আমরা কয়েক দিন ধরে দিন-রাত পাহারা দিয়ে যাচ্ছি। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন এবং হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে।

প্রতিবাদ সমাবেশে যশোর জেলা পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সহসভাপতি জয়ন্ত বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রতন আচার্য, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হরিদাস মজুমদার, প্রদীপ বিশ্বাস, মদন মোহন চক্রবর্তী, তৃপ্তি রানী বৈরাগী প্রমুখ বক্তব্য দেন।