রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের গাড়ি বহর। আজ সকালে তোলা
রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের গাড়ি বহর। আজ সকালে তোলা

সাজেক থেকে ফেরার পথে তিন পর্যটককে অপহরণ, পরে মুক্তি

সাজেক থেকে ফেরার পথে তিন পর্যটককে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। তবে অপহরণের কিছুক্ষণ পরই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

অপহরণের শিকার তিনজনই ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা। তাঁরা হলেন মো. মজিবুর রহমানের ছেলে এস এম নাহিদুজ্জামান (৩৮), কুদ্দুস ফকিরের ছেলে মামুন ফকির (৩৮) ও হাবিবুর রহমানের ছেলে জোবায়ের আলম (২৮)।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানান, সাজেক থেকে প্রাইভেট কারযোগে খাগড়াছড়ি আসার পথে তিন পর্যটককে অপহরণ করা হয়। পরে পুলিশি তৎপরতায় তাঁরা দ্রুত মুক্ত হন। এখন তাঁরা পুলিশ হেফাজতে। তবে কারা অপহরণ করেছিল, তা তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জানাতে পারেননি।

অপহরণের শিকার নাহিদুজ্জামান বলেন, ‘খাগড়াছড়ি ফেরার পথে আমাদের অপহরণ করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর মুক্তি পাই। প্রাইভেট কারে ফিরছিলাম আমরা।’

পুলিশ জানায়, দীঘিনালার বোয়ালখালীর মাছ বাজার এলাকার রাস্তার ওপর পৌঁছালে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারী ব্যক্তিরা তাঁদের গাড়ির গতি রোধ করে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অপহরণকারীরা অপহৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনের কাছে ফোন করে টাকা দেওয়ার জন্য বলে। এরপর অপহৃত ব্যক্তিদের একজনের আত্মীয় খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপারের মুঠোফোন নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানান। পুলিশ সুপার অপহৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে অপহৃত ব্যক্তিদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ফোন করেন। পুলিশ সুপারের নম্বর থেকে ফোন আসার পর দুষ্কৃতকারীরা পুলিশের তৎপরতার বিষয়টি বুঝতে পেরে অপহৃত ব্যক্তিদের ছেড়ে দেয়।

অপহরণের শিকার নাহিদুজ্জামান আরও বলেন, অপহরণকারী ব্যক্তিরা তাঁদের তিনজনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটা করাতকলে নিয়ে যান। সেখানে মারধর করে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে এক আত্মীয়কে কৌশলে এসএমএস দিয়ে বিষয়টা জানান তিনি। পরে পুলিশের ফোন এলে তাঁদের ছেড়ে দেয়।

উল্লেখ্য, গত বুধবার খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্রে করে গণপিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামের এক বাঙালি যুবকের গণপিটুনিতে মৃত্যুর পর সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে রাঙামাটিতেও। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনের সংঘর্ষে দুই জেলায় চারজন মারা যান।

তিন দিন সাজেকে না যাওয়ার পরামর্শ

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন এক জরুরি আইনশৃঙ্খলা সভায় সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে আগামী তিন দিন পর্যটকদের না যেতে নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ সকালে অনুষ্ঠিত এক সভায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সকাল ১০টার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক জরুরি আইনশৃঙ্খলা সভার আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন, জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোতাছেম বিল্যাহসহ আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা। সভায় বর্তমান পরিস্থিতি ও অবরোধের কারণে সাজেকে টানা তিন দিন দেড় হাজার পর্যটকের আটকে পড়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। পরে আগামীকাল বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার সাজেকে পর্যটক না যেতে নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোতাছেম বিল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা আগামী তিন দিন পর্যটকদের সাজেকে না যেতে নিরুৎসাহিত করছি। অবরোধের কারণে গত তিন দিন বহু পর্যটক আটকে পড়েছেন। আজ তাঁদের কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মূলত অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাজেকে পর্যটক না যেতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’