‘একটা পরিবারকে নাই করে দিল’

মা স্বর্ণা রানী সরকারের সঙ্গে পারমিতা সরকার
ছবি: সংগৃহীত

মঙ্গলবার, বেলা প্রায় সাড়ে ১১টা! সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বারোয়ারি বটতলা এলাকার একটি ঘরে কয়েকজন নারী আহাজারি করছিলেন। তাঁদের ছোট ভাই বিকাশ সরকার, তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ের হত্যাকাণ্ডে স্তম্ভিত তাঁরা। ‘একটা পরিবারকে নাই করে দিল’ বলে আহাজারি করছিলেন একজন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানাচ্ছিলেন আরেকজন।
উপজেলা সদরের বারোয়ারি বটতলা এলাকার কালীচরণ সরকারের ছোট ছেলে, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের একমাত্র মেয়ে নিজ বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

নিজেদের তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলায় স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকতেন বিকাশ সরকার। ওই ভবনের আরেক পাশে থাকতেন তাঁর বড় দাদা প্রকাশ সরকার। তাঁদের মা শান্তি রানী (৯২) ছেলেদের সঙ্গেই থাকেন।
বিকাশ সরকারের আত্মীয় পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার একটি কলেজের শিক্ষক রমন বিশ্বাস বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ড কেন ঘটল, তা বুঝতে পারছি না।’ আরেক আত্মীয় স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী প্রীতম ভৌমিক বলেন, ‘এ খবর পেয়ে আমরা সবাই স্তম্ভিত হয়ে পড়েছি।’ তাড়াশ বাজারে ব্যবসা করেন নিহত বিকাশ সরকারের ভাগনে মিঠুন সরকার। তিনি বলেন, ‘বাজারে একসময় মামার ওষুধের ব্যবসা ছিল। কয়েক বছর আগে সেই ব্যবসা বাদ দিয়ে পুকুর ও আবাদি জমি নিয়েই ছিলেন। সঙ্গে মন্দিরের বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকতেন।’

বিকাশ সরকার

গত শনিবার বিকাশ সরকার স্থানীয় একটি মন্দির কমিটির সভায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি মুঠোফোনে কারও সঙ্গে কথা বলে চলে আসেন। এরপর তাঁকে আর কোথাও দেখা যায়নি।
গত সোমবার রাতে উপজেলা সদরের বারোয়ারি বটতলা মহল্লার নিজ বাড়ি থেকে তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ওই পরিবারের তিনজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন কালীচরণ সরকারের ছোট ছেলে বিকাশ সরকার (৪৫), তাঁর স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৪০) ও মেয়ে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা সরকার (১৫)।

পারমিতা ক্লাসে ভালো ছাত্রী ছিল। ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলী আহসান বলেন, গত বার্ষিক পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ক্লাসে ১১০ জনের মধ্যে তার রোল নম্বর ছিল ১২। কেন এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হলো তাকে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার আহ্বান জানান তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হত্যাকারীরা তাঁদের হত্যা করে ফ্ল্যাটে তালা লাগিয়ে দিয়ে যায়। স্বজনেরা দুই দিন ধরে তাঁদের খোঁজ না পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে তালা ভেঙে মেঝেতে ও বিছানায় তাঁদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে।

তাড়াশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নূরে আলম বলেন, মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্বজনদের ধারণা, রোববার রাত থেকে সোমবারের কোনো এক সময়ে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শামিউল আলম বলেন, যেহেতু একটি পরিবারের তিনজনকে একইভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাতে মনে হয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় থাকতে পারে। ঘটনাসংশ্লিষ্ট আলামত জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে কাজ চলছে।