‘বাবা বলেছিলেন আজ ঢাকায় ফিরবেন; ফিরলেন, তবে লাশ হয়ে’

মাদারীপুরের শিবচরে এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ নিতে নিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবার অনন্তপুর গ্রামের ছেলে জাহিদ হাসান (৪০) ২০ বছর ধরে গাড়ি চালান। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকায় চলাচলকারী ইমাদ পরিবহনে যোগ দেন সাত মাস আগে। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকায়। আজ রোববার সকালে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বাস ছিটকে পড়ে নিহত ১৯ জনের একজন বাসচালক জাহিদ। দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বাসটির সহকারী ইউসূফ মিয়া (২৩) ও সুপারভাইজার মিনহাজ (২৫)।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তাঁর সন্তানেরা দিশাহারা। লাশ শনাক্তের পর বিকেল ৪টার দিকে জাহিদের ছেলে রাতুল হাসান শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে লাশ নিয়ে যায়। এ সময় ছেলে বলে, ‘বাবার সঙ্গে আমার দেখা বৃহস্পতিবার। এরপর আর দেখা হয়নি। সর্বশেষ যখন বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল, তখন বাবা বলেছিলেন আজ ঢাকায় ফিরবেন। বাবা ঠিকই ফিরলেন; তবে লাশ হয়ে। বাবার এমন মৃত্যু আমরা কীভাবে মেনে নেব?  আমাদের ঘরে বাবা ছাড়া রোজগার করার আর কেউ নাই।’

জাহিদ হাসান স্ত্রী সীমা, ছেলে রাতুল হাসান ও ওবায়দুল্লাহকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার ধোলাইপাড় এলাকায়। ওবায়দুল্লাহ পড়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে আর বড় ছেলে রাতুল দশম শ্রেণির ছাত্র।

বাসটির সহকারী ইউসূফ মিয়া পাবনার মুরাদনগর উপজেলার সুজানগর গ্রামের গহর আলীর ছেলে। স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন গোপালগঞ্জে। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি এই বাসের চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করছিলেন। হাসপাতালের অনুসন্ধান কেন্দ্রে গিয়ে লাশটি ইউসূফের বলে শনাক্ত করেন তাঁর স্বজন নাইমুল ইসলাম।

বিকেল ৫টার দিকে নাইমুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে হাসপাতালে আসি। পড়ে থাকা লাশটি আমার খালুর। আমার খালুর দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে পাবনায় থাকেন। আর দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তারকে নিয়ে তিনি গোপালগঞ্জ শহরের পুলিশ লাইনস এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। আমরা তাঁর মরদেহ নিয়ে গোপালগঞ্জে যাব।’

বাসটির সুপারভাইজার মিনহাজকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বেলা ১১টার দিকে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। মিনহাজের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের চরমানিকদা এলাকায়।

ইমাদ পরিবহনের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) ওয়াহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনায় বাসের চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজার মারা গেছেন। আইনি জটিলতা কাটিয়ে তাঁরা তিন কর্মীর পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক বলেন, ইমাদ পরিবহনের বাসটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল, বৃষ্টি হচ্ছিল এবং এর মধ্যে দ্রুতগতিতে চলার কারণে এত বড় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। বাসটির সামনের অংশে থাকা যাত্রী, চালক ও সহকারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।