শরীয়তপুরে বিস্কুট, পাউরুটি ও কেক বানানোর ৯৫টি বেকারি কারখানা লোকসানের মুখে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চিনি, ময়দা, তেল, গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেভাবে বিক্রয়মূল্য বাড়াতে না পারায় কারাখানাগুলো লোকসানের মুখে পড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ ঋণ করে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শরীয়তপুর কার্যালয় ও বেকারি মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলায় নিবন্ধিত ৯৫টি বেকারি কারাখানা আছে। এর মধ্যে শরীয়তপুর বিসিক শিল্পনগরীতে আছে ১০টি। এসব কারখানা থেকে বিস্কুট, পাউরুটি, কেকসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বানানো হয়। কয়েক বছর ধরে বেকারির খাদ্যসামগ্রী বানানোর কাঁচামালের দাম বাড়ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি ১১০ টাকা, ময়দা ৬২ টাকা কেজি, পাম তেল ১৩৫ টাকা লিটার, ডালডা ১৫৪ টাকা কেজি দরে ক্রয় করতে হচ্ছে বেকারি মালিকদের। এ ছাড়া পণ্য প্রস্তুতে ব্যবহৃত ডিম, কাগজ, পলিথিন, গ্যাস, জ্বালানি তেল ও জ্বালানি কাঠের দাম বেড়েছে। বারবার কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে পণ্যের উৎপাদনমূল্যের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের সমন্বয় করতে পারছেন না কারখানার মালিকেরা। ফলে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি কেউ কেউ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। কোনো কোনো কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে।
প্রতিদিন যে পরিমাণ কাঁচামাল ব্যবহার করতে হয়, গত ৬ মাসে তার দাম বেড়েছে অন্তত ৩০ শতাংশ। কিন্তু এই ৬ মাসে উৎপাদিত পণ্যের দাম সেভাবে বাড়েনি।রুহুল আমীন, মেরি ফুডের পরিচালক
শরীয়তপুর বেকারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন হাওলাদারের শরীয়তপুর বিসিক শিল্পনগরীতে একটি বেকারি কারখানা আছে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় তিনি লোকসানের মুখে পড়ে কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি কারখানাটি ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন। আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি দিয়েছিলাম। দুই-তিন মাস পরপরই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। আমরা উৎপাদন ব্যয় ঠিক রাখতে পারছিলাম না। দুই বছরে ৩০ লাখ টাকা লোকসান করেছি। উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি।’
শরীয়তপুর বিসিক শিল্পনগরীর মেরি ফুডের পরিচালক রুহুল আমীনের কারখানায় প্রতিদিন ৪০০ কেজি ময়দা ও ২০০ কেজি চিনির খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত করা হয়। রুহুল আমীন বলেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ কাঁচামাল ব্যবহার করতে হয়, গত ৬ মাসে তার দাম বেড়েছে অন্তত ৩০ শতাংশ। কিন্তু এই ৬ মাসে উৎপাদিত পণ্যের দাম সেভাবে বাড়েনি। ব্যবসাটি টিকেয়ে রাখতে পারছেন না। প্রতি মাসেই লোকসান গুনতে হচ্ছে। ব্যাংকঋণের বোঝা বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে কারখানাটি বন্ধ করে দিতে হবে।
শরীয়তপুর সদরের প্রেমতলা এলাকার মদিনা ব্রেডের মালিক মামুন হোসেন বলেন, ‘আমার কারখানায় উৎপাদন ও বিপণনে সব মিলে ৬০ শ্রমিক কাজ করেন। মাস শেষে তাঁদের বেতন দিতে পারছি না। প্রতি মাসেই মূলধনে ঘাটতি হচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে, কিন্তু আমরা স্থানীয় পর্যায়ের বাজারে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে পারছি না।’
শরীয়তপুরের বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা অর্ক বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিনিয়ত কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে ক্ষুদ্র শিল্পগুলো অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বেকারি কারখানাগুলো এখন লোকসানের মুখে। কারখানার মালিকেরা উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূল্য সমন্বয় করতে পারছেন না। ফলে মালিকদের নানাভাবে ঋণসহায়তা দিয়ে কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।