ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার এক হতদরিদ্র নারীকে নিরুদ্দেশ দেখিয়ে সরকারের ভিডব্লিউবির উপকারভোগীর তালিকা থেকে নাম কেটে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই নারীর নাম অনুপা (৪৪)। তিনি উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের লংপুর গ্রামের মৃত আহাদুল ইসলামের স্ত্রী।
বিষয়টি নিয়ে অনুপা এই প্রতিবেদককে কিছু কাগজপত্র দেখান। তাতে দেখা যায়, ওই নারী সরকারের ভিডব্লিউবি (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট, সাবেক ভিজিডি) দুই বছর মেয়াদি কার্যক্রমের ২০২৩-২৪ তালিকাভুক্ত উপকারভোগী ছিলেন। অনলাইন তালিকার ২৪ নম্বর ক্রমিকে তাঁর নাম রয়েছে। ভিডব্লিউবি কার্যক্রমের কার্ড পাওয়ার পর উপকারভোগী হিসেবে তিনি গত ৯ মাসে ২৭০ কেজি (প্রতি মাসে ৩০ কেজি) চাল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে বরাদ্দ পেয়েছেন।
অনুপা জানান, প্রকল্প চলমান থাকা অবস্থায় তাঁর নাম কেটে বাদ দিয়ে কার্ডটি রেখে দিয়েছে ইউপি কর্তৃপক্ষ। কী কারণে নাম কাটা হয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চেয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার গেছেন। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুপার স্বামী নেই। তিনি একজন দুস্থ নারী। স্বামীর ভিটা ছাড়া তাঁর আর কোনো সম্পদ নেই। তাঁর দুই ছেলে রয়েছে। তাঁরা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেন। সরকারি সহায়তা প্রকল্প থেকে নাম বাদ যাওয়ায় এখন খুব কষ্টে দিন যাপন করছেন অনুপা। পেটের দায়ে কখনো কখনো বাবার বাড়িতে গিয়েছিলেন, কিন্তু কখনো নিরুদ্দেশ ছিলেন না।
উপকারভোগীর তালিকা থেকে অনুপাকে বাদ দেওয়ার কারণ জানতে চেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চণ্ডীপাশা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ২০২৩-২৪ সালের ভিডব্লিউবি কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর তিনি এই ইউনিয়নে যোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, নিরুদ্দেশ থাকার তথ্য পেয়ে নান্দাইল উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অনুপার নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। এখানে তাঁর কিছু করার নেই। তা ছাড়া প্রকল্পের বরাদ্দ বিতরণের সময় অনুপা একাধিকবার অনুপস্থিত ছিলেন বলে দাবি চেয়ারম্যানের। তিনি আরও বলেন, অনুপা এলাকায় থাকেন না। ভবিষ্যতে সরকারি কোনো সুবিধা এলে ওই নারীকে দেওয়া হবে।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অনুপার নাম কেটে দেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়। কথা হয় নান্দাইল উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. রাশিদা রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, কেউ নিরুদ্দেশ থাকলে বা মারা গেলে সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট ইউপি থেকে তাঁর কার্যালয়ে পাঠানো হয়ে থাকে। মহিলাবিষয়ক কার্যালয় থেকে অনুপার নাম কর্তন করা হয়নি। এগুলো ইউনিয়ন পরিষদের কাজ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবেন।
বিষয়টি নজরে আনা হলে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভিডব্লিউবি কার্যক্রম বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অরুন কৃষ্ণ পাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুপাকে বলুন আমার কাছে একটি আবেদন করার জন্য। তাহলে তদন্ত করে কী কারণে ওই নারীর নাম কাটা গেল তা দেখা হবে।’