চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় উপাচার্যের দপ্তরের সামনে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে।
আন্দোলনরত কর্মচারীরা বলছেন, তাঁদের চাকরি স্থায়ী না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই আন্দোলন চলবে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, চাকরি বা নিয়োগের ব্যাপারে তাদের কোনো হাত নেই। এ ছাড়া একসঙ্গে এত পদ সৃষ্টি হয় না। বিগত ৩ নিয়োগে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের ১৫৪ জনের মধ্য থেকে ১৮ জনকে চাকরি দিয়েছেন রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যরা।
এর আগে গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরের সামনের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা এ কর্মসূচি শুরু করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুব, কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন ও রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে বেলা পৌনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সদস্যরা ফটক ভেঙে উপাচার্যসহ কর্মকর্তাদের অবমুক্ত করেন। কর্মচারী সমিতির সদস্যরা দীর্ঘ সময় ধরে গতকাল তালা ভাঙলেও ওই সময় সেখানে পুলিশ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
আজ সকালে প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, আন্দোলনরত কর্মচারীরা মেঝেতে বসে আছেন। এ সময় তাঁদের ‘চাকরি স্থায়ীকরণ করা হোক’ লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড ধরে থাকতে দেখা যায়। কর্মচারীদের মধ্যে অনেকে অসুস্থ হয়ে শুয়ে পড়ছেন। তবে তাঁরা সবাই একটা আশা নিয়ে বসে আছেন, হয়তো তাঁদের জন্য ভালো কোনো সংবাদ নিয়ে আসবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী মো. নাদিমুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুব স্যার আসার পর প্রথম দিকে আমাদের নিয়ে বেশ উদ্যোগ ছিল। তবে তাঁর সময়ে তিনটি নিয়োগ গেল। নিয়োগে ১৮ জনকে চাকরি দিয়েছেন। এই ১৮ জনের মধ্যেও নিয়োগ–বাণিজ্য করেছেন। অযোগ্য ব্যক্তিদের চাকরি দিয়েছেন। আমাদের বারবার আন্দোলনের পর ২ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি একটা নীতিমালা সুপারিশ করে। এর পরিপেক্ষিতে ৫ মে ২০২৩ সালে ২৯তম রিজেন্ট বোর্ডে আমাদের নিয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন হলেও এরপর আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।’
আরেক চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সাত-আট বছর ধরে আমাদের আশ্বাস দিয়ে রেখেছে। আমাদের যদি নিয়োগ না দিবেন, তাহলে কেন এত দিন রাখলেন? প্রতিবার আমাদের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। সেই আশা নিয়েই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছি এবং কাজ করেছি। এবার আমাদের চাকরির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে হবে। তা না হলে আমরা এখান থেকে উঠব না।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে এত পদের সৃষ্টি হয় না। তবে ইতিমধ্যে চুক্তিভিত্তিক ১৫৪ জনের মধ্যে ১৮ জনের চাকরি স্থায়ী হয়েছে। নিয়মনীতি মেনেই রিজেন্ট বোর্ড নিয়োগ দেয়। এ ছাড়া গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে গতকাল উপাচার্যের দপ্তরে সভা চলছিল। ওই সময় তারা উপাচার্যের দপ্তরের প্রধান ফটকে তালা বন্ধ করে দিয়ে ঠিক কাজ করেনি। তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে, সেটা আগে নোটিশ দেওয়া উচিত ছিল।’