সিলেটে এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং, গ্রাহকদের ভোগান্তি

চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

সিলেটে এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকেরা। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে অফিস-আদালতে নিত্যদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ অর্ধেকে নেমে যাওয়ায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।

পল্লী বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে পল্লী বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাহক আছেন প্রায় ২৬ লাখ। এসব গ্রাহকের দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৪৯৭ দশমিক ৪৭ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সরবরাহ আছে ৩১০ মেগাওয়াট। বাকি ১৮৭ দশমিক ৪৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের হার ৩৭ দশমিক ৬৮। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তুলনায় পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের হার কম। পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের হার ২৬। তবে বিউবোর গ্রাহকদের লোডশেডিংয়ের হার ৫৫ দশমিক ৪৪।

তবে জেলা পর্যায়ে পল্লী বিদ্যুৎ ও বিউবোর লোডশেডিংয়ের হার প্রায় কাছাকাছি। জেলায় বিউবোর গ্রাহকদের চাহিদা ১৫৭ দশমিক ৪৭ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সরবরাহ আছে ৬৩ দশমিক ২৭ মেগাওয়াট। লোডশেডিংয়ের হার ৫৯ দশমিক ৮২। জেলায় পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা ৩০ মেগাওয়াট। বিপরীতে সরবরাহ আছে ১২ দশমিক ৭৩ মেগাওয়াট। লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ১৭ দশমিক ২৭ মেগাওয়াট। লোডশেডিংয়ের হার ৫৭ দশমিক ৫৭।

চলমান লোডশেডিংয়ের বিষয়ে বিউবোর পক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। সিলেট বিউবোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে চলমান গ্রীষ্ম মৌসুমে তীব্র দাবদাহ ও পবিত্র রমজান মাসের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা বেশি পরিমাণে বেড়ে গেছে। বিপরীতে রামপাল ৫০০ মেগাওয়াট থারমাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশুগঞ্জ ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও চট্টগ্রাম ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ত্রুটির কারণে বন্ধ থাকা এবং হাটহাজারী ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রে বিস্ফোরণের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে।

প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট বিভাগে পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং কম হওয়ার বিষয়টি সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়। এ ছাড়া পল্লী বিদ্যুতের এলাকাগুলোয় কলকারখানা আছে, সেটিও বিদ্যুতের সরবরাহ বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে জেলা পর্যায়ে প্রায় সমান দুই বিভাগের (পল্লী বিদ্যুৎ ও বিউবো) লোডশেডিং।

বিউবোর প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে এলাকাভেদে দিনে ও রাতে তিন থেকে চার ঘণ্টা হিসাব করে লোডশেডিংয়ের শিডিউল তৈরি করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি সেটি কাজে আসছে না। এ জন্য নতুন করে শিডিউল তৈরি করা হচ্ছে। এতে এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিংয়ের শিডিউল তৈরি করা হচ্ছে। চাহিদা ও বরাদ্দ অনুযায়ী সেটি কমবেশি হবে।

সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর মহাব্যবস্থাপক মো. আক্তারুজ্জামান লস্কর প্রথম আলোকে বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ-১-এর আওতায় গ্রাহক আছে ৪ লাখ ২৫ হাজার। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় দুই–তিন ঘণ্টা পরপর এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

আজ রোববার সিলেটে গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেটে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত আবহাওয়া একই ধরনের থাকতে পারবে বলে জানিয়েছেন সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন। তিনি বলেন, ১৯ ও ২০ এপ্রিল সিলেটে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।