ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে হালকা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বইছে। উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরে মাঝেমধ্যে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ ও চুনো নদ–নদীতে জোয়ারের পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এখন পর্যন্ত তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো পর্যায়ে পৌঁছায়নি। নিম্নচাপের সংকেত পেয়ে সুন্দরবনের ভেতর থেকে অনেক জেলে লোকালয়ে চলে এসেছেন।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন প্রতাপনগর। চারদিকে নদীবেষ্টিত এ জনপদের বাসিন্দারা এখনো ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। অনেকেই এখনো বাস্তুভিটায় ফিরতে পারেননি। এর মধ্যে নতুন করে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কসংকেত দেওয়ায় এ ইউনিয়নের বাসিন্দারা আতঙ্কে আছেন।
আশাশুনির আনুলিয়া ইউনিয়নেও একই অবস্থা। নদীবেষ্টিত এ ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে আছে। চরম আতঙ্কে আছেন শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মানুষ। এই তিন ইউনিয়নের একাধিক স্থানে বাঁধ ঝুঁকিতে আছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় ২৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ২ উপজেলায় ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি জলযান ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের জন্য ৮৫ হাজার সিনথেটিক ব্যাগ ও ১২ হাজার জিও ব্যাগ রাখা হয়েছে। সুপেয় পানি, খাবার স্যালাইন ও শুকনা খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ৮৭টি মেডিকেল দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা ইকবাল হুসাইন চৌধুরী বলেন, তাঁদের আওতায় ৪টি স্টেশন ও ১২টি ক্যাম্পে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে সুন্দরবনের মধ্যে কর্মরত জেলেদের বন বিভাগের ক্যাম্পের পাশে কিংবা নিরাপদ স্থানে থাকতে।
বুড়িগোয়ালিনী এলাকার জেলে রমজান আলী বলেন, নিম্নচাপের সংবাদ শুনে তাঁরা অনেকে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় লোকালয়ে ফিরে এসেছেন।
আশাশুনির প্রতাপনগর গ্রামের হাওলাদারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাঁধ ভেঙে আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। আবার বাঁধ ভাঙলে ভিটা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’
হাওলাদারবাড়ি এলাকার পাশে পাউবোর যে বাঁধটি আছে, তা ঝুঁকিপূর্ণ। নয়াখালি গ্রামের ইশরাদ আলী জানান, অমাবস্যা চলছে। তার সঙ্গে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বইছে। পাউবোর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ যেকোনো সময় ভেঙে প্লাবিত হতে পারে।
প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের আঘাতের ক্ষতি এখনো তাঁর এলাকার মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারেননি। অনেকে এখনো তাঁদের ভিটায় ফিরতে পারেননি। পাউবোর পক্ষ থেকে কয়েকটি বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। তারপরও চুইবাড়িয়া, সোনাতনকাটি, রুয়েরবিল, চাকলা, হরিশখালি এলাকার বাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। অনেক স্থানে বাঁধ সরু হয়ে গেছে।
শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম বলেন, তাঁর ইউনিয়নের খুটিকাটা, চণ্ডীপুর, কামালকাটি, পূর্ব ঝাপাসহ আর চার-পাঁচটি স্থানে বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
সাতক্ষীরা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, তাঁদের আওতাধীন ১৫টি স্থানের বাঁধ কমবেশি ঝুঁকিপূর্ণ আছে। তাঁরা সিনথেটিক ও জিও ব্যাগ প্রস্তুত রেখেছেন।