বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন বিজিবি কর্মকর্তারা। আজ শুক্রবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ভজনপুর
বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন বিজিবি কর্মকর্তারা। আজ শুক্রবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ভজনপুর

‘ফেনসিডিল পাওয়ায়’ তেঁতুলিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানকে আটকের চেষ্টা বিজিবির, স্থানীয়দের বাধা

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিনের বাড়ি থেকে ১০৭ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের কথা জানিয়েছে বিজিবি। এ অভিযোগে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক করে নিয়ে যেতে চাইলে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ইউপি চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিনের বাড়ি ভজনপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা ভাঙ্গীপাড়া এলাকায়। তিনি ভজনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে আটকের খবরে স্থানীয় বাসিন্দারা ভজনপুর বাজারে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন যানবাহনে যাতায়াতকারীরা। পরে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিজিবি সদস্যরা পরে ইউপি চেয়ারম্যানকে ছেড়ে দিয়ে জব্দ করা ফেনসিডিল নিয়ে যান।

ইউপি চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিনের দাবি, তিনি কোনো মাদকের সঙ্গে জড়িত নন। সম্প্রতি তিনটি গরু আটকের বিষয় নিয়ে বিজিবির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে তাঁকে ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

তবে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল জিয়াউল হক বলেন, ‘এটা একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং (ভুল–বোঝাবুঝি) হতে পারে। তবে সীমান্ত এলাকায় বিজিবির নিয়মিত চোরাচালান দমন অভিযানের অংশ হিসেবে ওই বাড়িতে তল্লাশি করা হয়েছে। এটা হয়তো যারা আমাদের তথ্য দিয়েছে, সেটাতে তাঁকে ফাঁসানোর জন্য বা তাঁর সঙ্গে কারও শত্রুতা আছে, এমনটাও ঘটতে পারে। তবে এটা সত্য যে সেখানে ফেনিসিডিলি পাওয়া গেছে।’

জিয়াউল হক আরও বলেন, উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতে বিক্ষুব্ধ জনতাকে থামাতে চেয়ারম্যানকে আটক করা হয়নি। এমনকি এ ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি। তবে উদ্ধার করা ফেনসিডিলগুলো থানায় জমা দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিষয়টি তদন্ত করা হবে।

স্থানীয় লোকজন ও ইউপি চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, ‘শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বাড়িতে বসে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিন। এ সময় প্রথমে বিজিবি দুজন সদস্য এসে ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেন, আপনার সঙ্গে কথা আছে, লোকজনকে চলে যেতে বলেন। স্থানীয় লোকজন চলে যাওয়ার পরপরই অন্তত পাঁচটি গাড়িতে ৩০–৪০ জন বিজিবি সদস্য বাড়িতে আসেন। এরপর তাঁরা পরিবারের সবার মুঠোফোনগুলো নিয়ে নেন। পরে চেয়ারম্যানসহ সবাইকে ঘর থেকে সরে যেতে বলেন। এর কিছুক্ষণ পর বিজিবি সদস্যরা আবারও সবাইকে ডেকে ঘরে তল্লাশি চালানোর কথা বলেন। পরে মসলিম উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিটি ঘর তল্লাশি করেন বিজিবির সদস্যরা। শেষে মসলিম উদ্দিনের ঘরে গিয়ে বিজিবি সদস্যরা দুটি সাদা রঙের মোড়ানো বস্তা দেখিয়ে কী রয়েছে জানতে চান। পরে বস্তা দুটি খুলে দেখা যায় সেখানে ফেনসিডিল। তখন ফেনসিডিলসহ চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিনকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যান বিজিবির সদস্যরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এরই মধ্যে চেয়ারম্যানকে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে স্থানীয় লোকজন বিজিবি ও পুলিশের গাড়ির গতিরোধ করে আটকে দেন। ধীরে ধীরে ওই এলাকায় লোকজন বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে সহস্রাধিক মানুষ বিজিবি, পুলিশ সদস্যদের গাড়িসহ অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ ছাড়া এই খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা দুইটার দিকে ভজনপুর বাজারেও পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন।

খবর পেয়ে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল জিয়াউল হক, তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি ও তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রবীর কুমার রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

তেঁতুলিয়ার ইউএনও ফজলে রাব্বি বলেন, মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন, ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ফেনসিডিল উদ্ধার ও তাঁকে আটকের ঘটনায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরে ১৮ বিজিবির সিও এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তদন্ত করা হবে।