এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। এ জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার–৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় নেওয়া হয়।
গ্রামের নারীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য গবাদিপশু কিনতে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল একটি ফাউন্ডেশনের। ১৫ দিন ধরে নেওয়া হয় ঋণের জন্য সঞ্চয়। ঋণ দেওয়ার নিদিষ্ট দিনে গ্রাহকেরা ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে দেখলেন সবাই লাপাত্তা। পড়ে আছে শুধু কাগজপত্র ও চেয়ার-টেবিলের মতো কিছু আসবাবপত্র।
এ ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের গোসাইরগাঁও গ্রামে। গত রোববার সকালে অফিস ফেলে সবাই লাপাত্তা হয়ে যায়। এর পর থেকে কৃষি ফাউন্ডেশন নামের ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মুঠোফোনও বন্ধ। দূর্গাপুর ইউনিয়নের গোসাইরগাঁও, রাণীগঞ্জ, বাড়িগাঁও গ্রামের প্রায় ২০০ নারীর ৮০ লাখ টাকা সঞ্চয় হিসেবে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের।
গতকাল মঙ্গলবার রাণীগঞ্জ গ্রামে সরেজমিন দেখা যায়, রাণীগঞ্জ বাজারের অদূরে গোসাইরগাঁও গ্রামে খোলামেলা একটি স্থানে একতলা পাকা ঘর। সেটি তালাবদ্ধ। কোনো সাইনবোর্ড নেই। গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ঘরটিতে ছয় ব্যক্তি কৃষি ফাউন্ডেশন নামের একটি অফিস চালাচ্ছিলেন। গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে যার কার্যক্রম শুরু হয়। স্থানীয় মো. তাজউদ্দিন নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারীদের আয় বাড়াতে ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ঋণ দেওয়ার কথা প্রচার করেন প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এরপর গ্রামের নারীরা গ্রাহক হন। প্রত্যেকেই ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় হিসেবে প্রতিষ্ঠানে জমা করেছিলেন। এর বিপরীতে এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। ১ মে থেকে সংস্থার মাঠকর্মীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে পাস বইয়ের মাধ্যমে ঋণের বিপরীতে সঞ্চয়ের টাকা সংগ্রহ করছিলেন। এভাবে গ্রামগুলোর ২০০ নারীর কাছ থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা সঞ্চয় সংগ্রহ করা হয়। ঋণের টাকা হস্তান্তরের কথা ছিল ১২ মে। কিন্তু সেদিন গ্রাহকেরা গিয়ে দেখতে পান সংস্থার কার্যালয়ে কেউ নেই।
গ্রাহকদের কাছে দেওয়া পাস বইয়ের ওপরে প্রতিষ্ঠানের নাম হিসেবে লেখা ‘কৃষি ফাউন্ডেশন’। এটি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বলেও লেখা আছে। তবে কাপাসিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন, এই নামের কোনো এনজিওর বিষয়ে তাঁদের কাছে তথ্য নেই। এমন নামে তাঁদের অফিস থেকে কোনো এনজিও নিবন্ধন নেয়নি।
ভুক্তভোগী নারীদের একজন রাণীগঞ্জের তাসলিমা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঋণের সঞ্চয় হিসেবে তাঁর কাছ থেকে দৈনিক টাকা নেওয়া হতো। সব মিলিয়ে তিনি ৫০ হাজার টাকা জমা করেছিলেন। এর বিপরীতে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। মোছা. রুমা আক্তার বলেন, তাঁকে গরু কেনার জন্য দুই লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে সঞ্চয় নেওয়া হয়। মোট সঞ্চয় জমা হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু ঋণ দেওয়ার দিন এসে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ। এমনকি সব কর্মকর্তার মুঠোফোনও বন্ধ।
কৃষি ফাউন্ডেশন নামের ভাড়া নেওয়া ওই ভবনের মালিক মো. তাজউদ্দিন। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। কৃষি ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তার মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
দূর্গাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. কাইয়ূম মোল্লা বলেন, ওই বাড়িতে এর আগে একটি এনজিও সংস্থা ছিল। তারা চলে যাওয়ার পর সেখানে কৃষি ফাইন্ডেশন নামের একটি এনজিও এসে ভাড়া নিয়ে কাজ শুরু করে। তবে তারা প্রতারণা করে প্রচুর টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।