২৮ অক্টোবরের সমাবেশে যোগ দিতে আজ বুধবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকার পথে যাত্রা করবেন। তবে বড় দলে নয়, নেতা-কর্মীরা দুই-তিনজনের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ঢাকার পথে রওনা হবেন। গ্রেপ্তার–হামলা এড়াতেই এমন কৌশল নিয়েছে দলটি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু নেতা-কর্মী ঢাকায় পৌঁছেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।
সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ের এই সমাবেশ ঘিরে উজ্জীবিত চট্টগ্রাম বিএনপি। সমাবেশ সফল করতে চলছে নানা প্রস্তুতি। চলছে প্রচারপত্র বিলি ও ঘরোয়া বৈঠক। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা দল বেঁধে বাস বা ট্রেনে ঢাকা যাবেন না। দুই থেকে তিনজনের দলে ভাগ হয়ে ঢাকা যাবেন। যে যাঁর মতো সেখানে থাকবেন। সমাবেশের দিন সকালে সবাই জড়ো হয়ে সমাবেশস্থলে পৌঁছাবেন। ট্রেনে গেলে একই বগিতে সবাই একসঙ্গে থাকবেন না। বিভিন্ন বগিতে ভাগ হয়ে যাবেন। আবার কেউ সকালে গেলে কেউ রাতের ট্রেনে যাবেন। বাসেও তাঁরা একই কৌশল নেবেন। যাতে পুলিশ একসঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের আটক করতে না পারে।
এ দিকে নগর ও জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগের মামলা রয়েছে। এসব মামলায় অনেকে পলাতক। ঢাকার সমাবেশ ঘিরে পুলিশ যাতে ধরপাকড় চালাতে না পারে, সে জন্য এখন তাঁরা রাতের বেলায় বাড়িতে অবস্থান করছেন না।
৫ অক্টোবর রোডমার্চ কর্মসূচি শেষে চট্টগ্রাম থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন নেতা-কর্মীরা ঢাকায় যাচ্ছেন।
বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও সমাবেশে অংশ নেবেন। নেতা-কর্মীরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ইলিয়াস আলী প্রথম আলোকে বলেছেন, আজ রাত থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকা যাওয়া শুরু করবেন। তবে তাঁরা সবাই একসঙ্গে যাবেন না। একই ট্রেনে গেলেও একেকজন একেক বগিতে থাকবেন। ঢাকা গিয়ে সমাবেশের দিন তাঁরা মিলিত হবেন। গ্রেপ্তার এড়াতে এই কৌশল নিয়েছেন তাঁরা।
ঢাকার সমাবেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশগ্রহণ করবে বলে জানান নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ এখন বাজারে গিয়ে ফিরে আসছে। ক্ষুব্ধ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চায়। এ জন্য ঢাকায় সমাবেশে অনেক সাধারণ মানুষও অংশ নেবে। বিএনপির আন্দোলন এখন সাধারণ মানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। সবার একটাই দাবি, সরকারের পতন।
নগর ও জেলার নেতা-কর্মীরা ঢাকার সমাবেশকে সফল করতে প্রস্তুতি সভাও করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার নগরের দোস্ত বিল্ডিং কার্যালয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের পর সরকার পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।
ওই দিন ঢাকা শহর থাকবে বিএনপির নেতৃত্বে জনগণের দখলে। জনতার গণজোয়ারে আওয়ামী লীগ বুড়িগঙ্গায় তলিয়ে যাবে। দেশ-বিদেশে কোথাও তাদের স্থান হবে না। সরকার পুলিশ ও র্যাবকে দলীয় বাহিনী হিসেবে বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে, যার ফলে সারা বিশ্বে এই বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হচ্ছে।
২৮ অক্টোবরের সমাবেশে যে নির্দেশনা আসবে, সেই অনুযায়ী আন্দোলনের প্রস্তুতি নেবে বলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন। তাঁরা প্রথম আলোকে জানান, সেদিন ঢাকায় রাজপথে অবস্থান করার নির্দেশনা এলে তাঁরা সেই অনুযায়ী থাকতে প্রস্তুত। সেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে তাঁরা যাচ্ছেন। তবে সবকিছু নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনার ওপর। এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ঘরে ফিরে আসতে চান না।