সুনামগঞ্জে আজ রোববার সকালে এক দফা বৃষ্টি হয়েছে। এরপর দিনভর ছিল কড়া রোদ। এক সপ্তাহ পর এই তপ্ত রোদ মানুষকে স্বস্তি দিলেও বন্যার পানি ধীরে নামার অস্বস্তি রয়েই গেছে। সুনামগঞ্জ এবং এর উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কম হওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে নদী ও হাওর দুই জায়গাতেই পানি কমছে শম্বুকগতিতে। যে কারণে মানুষের ভোগান্তি কমছে না।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সদর উপজেলার আলমপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাড়ি হাওরের পাড়ে। সেখানে পানি কমছে, তবে ধীরে। এখনো যাঁদের বাড়িঘর, উঠান, রাস্তাঘাটে পানি আছে, তাঁরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তিনি বলেন, সাধারণত বন্যার পানি চার-পাঁচ দিন থাকে। এবার দুই দফা বন্যা হওয়ায় সমস্যাটা বেশি হচ্ছে।
রোববার দুপুরে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওর পাড়ের রহমতপুর, আসামপুর, কাইক্কারপাড় গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমেছে। তবে উঠানে, রাস্তাঘাটে পানি আছে। নৌকা নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে তাদের।
রহমতপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালিক (৬০) বলেন, ‘রইদ উঠায় ভালা অইছে। অতদিন ত পানি ঝিম ধইরা আছিল। আজকু মনে অয় টান ধরব।’
একই গ্রামের রহিমা বেগমের (৫২) ঘরের বারান্দার নিচেই পানি। নৌকা ছাড়া তাঁদের যাতায়াতের কোনো উপায় নেই।
রহিমা বেগম বলেন, ‘বন্যা ত অতদিন থাকে না। ইবার পানি নামের না। আটকি গেছে। এর লাগি দুর্ভোগ বাড়ছে।’
এদিকে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা এলাকায় সড়কে পানি থাকায় এখনো মানুষ ওই স্থানটি নৌকায় পারাপার হচ্ছে। ১৬ জুন থেকে এই সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে। সড়কটি দিয়ে জেলা সদর থেকে চাকরির কারণে তাহিরপুর উপজেলায় যাতায়াত করেন মোশাররফ হোসেন। রোববার বিকেলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সকালে শক্তিয়ারখলা এলাকা নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়েছে। উজানের ঢল নামলেই এই স্থানে সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবা উচিত।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে শনিবার সকাল নয়টা থেকে রোববার সকাল নয়টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে কম। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে ১৫ মিলিমিটার ও চেরাপুঞ্জিতে ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে রোববার বেলা তিনটায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৫২ মিটার, যা বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচে। এবার সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার সর্বোচ্চ ৬৮ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল গত ১৮ জুন। এ সময় পুরো জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছিল।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এবারের বন্যায় জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। অসংখ্য বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয় প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। এরপর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে মানুষ বাড়িঘরে ফেরার প্রস্তুতি নেন। তখন আবার বন্যার অবনতি হয়ে যায়।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, ভারী বৃষ্টি না হলে আর কোনো সমস্যা হবে না। নদী ও হাওরে দুই জায়গাতেই পানি কমছে। বৃষ্টি হলে পানি আবার কিছুটা বাড়তে পারে। তবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে না।