ফরিদপুরে বিএনপির গণ–অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় বিএনপি নেতা–কর্মীদের আসামি করে মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলায় আসামি হিসেবে জেলা বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়েছে আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় এ মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক রায়হান কবির। মামলায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে পরস্পরের যোগসাজশে পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দেওয়া এবং ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশকে আঘাত করে গুরুতর ও সাধারণ জখম করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ গুলি করল, বিএনপির ছেলেদের গ্রেপ্তার করল, মারধর করল। আবার পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিল। পুলিশের এই বহুরূপী চরিত্র গণতন্ত্রের পথে একটা বাধা।সৈয়দ মোদাররেছ আলী, আহ্বায়ক, ফরিদপুর জেলা বিএনপি
এ মামলায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১২ জন এজাহারনামীয় ও ১ জন অজ্ঞাতনামা। তবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপির পদধারী কোনো নেতা নেই।
উল্লেখ্য গতকাল বুধবার শহরের অম্বিকা ময়দানে বিএনপির ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগের উদ্যোগে গণ–অবস্থান কর্মসূচিতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যুবলীগ-ছাত্রলীগ হামলা করে। পরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর ফলে বিএনপির গণ–অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।
মামলার খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী। তিনি বলেন, প্রশাসন তাঁদের অম্বিকা ময়দানে গণ-অবস্থানের জন্য অনুমতি দেয়। সেখানে প্রশাসনের সহযোগিতা করার কথা। পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে ময়দানের সামনে এসে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ বোমা ফাটায়, ঢিল ছোড়ে; পুলিশ কিছু বলে না। বিএনপির কর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে গেলে পুলিশ তখন গুলি করল, বিএনপির ছেলেদের গ্রেপ্তার করল, মারধর করল। আবার পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিল। পুলিশের এই বহুরূপী চরিত্র গণতন্ত্রের পথে একটা বাধা।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে যাঁরা পুলিশের ওপর হামলা করেছেন এবং এ হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের বেছে বেছে নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। কাউকে হয়রানির জন্য মামলা করা হয়নি।
মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও গতকালের গণ–অবস্থান কর্মসূচির সভাপতি এফ এম কাইয়ুম, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন (৫৫), জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হাসান। এজাহারভুক্ত হিসেবে গ্রেপ্তার ১২ জন রাজবাড়ীর বাসিন্দা, তাঁরা সবাই বিএনপির কর্মী। তাঁরা হলেন মো. কামরুজ্জামান (৪০), আবদুল হাই মণ্ডল (৫৫), মো. মিলন মণ্ডল (৩০), মো. জাহিদুল ভূঁইয়া (৪৫), মো. মোমিন শেখ (৪৫), মো. সাজাহান (৩৮), মো. শিপন ইসলাম (২০), মো. গণি মোল্লা (৪৬), মাহাবুব চৌধুরী দুলাল (৬৭), মো. শাহীনুর রহমান (৩৪), মো. সৌরভ শেখ (১৮) ও মো. আজাহার আলী (৩৫)।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল বলেন, ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। ১৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।