নওগাঁ-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির মতবিনিময় সভা করছিলেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোসা. আতিয়া খাতুন পুলিশ নিয়ে সেখানে হাজির হন। আচরণবিধি নিয়ে সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিনের সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মৃদু বাহাস হয়। একপর্যায়ে ছলিম উদ্দিন বক্তব্য দিয়ে দ্রুত কর্মিসভা শেষ করেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার ফতেজঙ্গপুর মাদ্রাসা মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদারের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তবে তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোসা. আতিয়া খাতুন।
ছলিম উদ্দিন তরফদার এবার নওগাঁ-৩ (বদলগাছি-মহাদেবপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাননি। পেয়েছেন সরকারের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। সে জন্য বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছলিম উদ্দিন তরফদারের পক্ষে গতকাল বিকেলে বদলগাছি উপজেলার ফতেহজঙ্গপুর মাদ্রাসা মাঠে কর্মিসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে বিকেল পাঁচটার দিকে উপস্থিত হন ছলিম উদ্দিন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোসা. আতিয়া খাতুন পুলিশ সঙ্গে নিয়ে সেখানে আসেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখে কর্মিসভায় উপস্থিত লোকজন কিছুটা হতচকিত হয়ে পড়েন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছলিম উদ্দিন তাঁকে বসতে বলেন। তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘স্যার, আমি বসতে আসিনি। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে। তাই এই মতবিনিময় কর্মিসভা বন্ধ করতে হবে।’ এ নিয়ে সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে মৃদু তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে ছলিম উদ্দিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জানতে চান, আচরণবিধিতে কী কী আছে। তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছলিম উদ্দিন তরফদারকে স্যার সম্বোধন করে বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধিতে বলা আছে, নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগে প্রচারণা চালানো যাবে না। সেটি আমার চেয়ে আপনি ভালো জানেন, স্যার। তখন আমরা আপনাদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেব না।’ তখন ছলিম উদ্দিন তরফদার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেন, ‘পরশু দিন আপনাদের অফিসের সামনে মাইক টাঙিয়ে মিটিং হয়েছে।’ তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আমাদের সেটি জানা নেই।’ এ সময় ছলিম উদ্দিন তরফদার বক্তব্য দিয়ে দ্রুত কর্মিসভা শেষ করেন।
সভায় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ছলিম উদ্দিন তরফদার বলেন, ‘আপনারা বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে এসেছেন। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হবে। ছলিম উদ্দিন তরফদার আছে এবং থাকবে। সেই নির্বাচনে প্রমাণ করে দেব, জনগণের সঙ্গে ছিলাম, আছি ও থাকব।’
আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মতবিনিময় সভা করা হচ্ছিল জানিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোসা. আতিয়া খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গিয়ে মতবিনিময় সভা বন্ধ করতে বলেছিলাম। তাঁরা মতবিনিময় সভা বন্ধ করেছিলেন। এ কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে বলে তিনি জানান।