শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু

এক মাসেও রহস্য জানা যায়নি, পরিবারের ক্ষোভ

১৮ আগস্ট ভোরে প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে ওই দম্পতির লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পরদিন হত্যা মামলা হয়।

শিক্ষক দম্পতি এ কে এম জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তার
ফাইল ছবি

গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধার হওয়ার রহস্য এক মাসেও উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল সোমবার পর্যন্ত নিহত দম্পতির ভিসেরা প্রতিবেদনই আসেনি। ফলে আটকে আছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও। এত দিনেও ঘটনার কূলকিনারা করতে না পারায় অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন তাঁদের স্বজনেরা।

নিহত জিয়াউর রহমানের বড় ভাই ও হত্যা মামলার বাদী আতিকুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ এত বড় বড় হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারে, কিন্তু আমার ভাই ও তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ এক মাসেও বের করতে পারেনি। আমার মা সারাক্ষণ কান্নাকাটি করেন। আমরাও চরমভাবে হতাশ। পুলিশকে ফোন করলে বারবার সেই একই কথা বলছে, তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।'

গত ১৮ আগস্ট ভোরে দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকায় প্রাইভেট কারের ভেতরে এ কে এম জিয়াউর রহমান (৫১) ও তাঁর স্ত্রী মাহমুদা আক্তার ওরফে জলির (৩৫) লাশ পাওয়া যায়। জিয়াউর গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মাহমুদা পাশেই টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। প্রাইভেট কারটি জিয়াউর রহমান নিজেই চালাতেন। প্রতিদিনের মতো ১৭ আগস্ট স্ত্রীকে নিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন তিনি।

শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে তাঁদের শরীরের বেশ কিছু নমুনা ভিসেরা প্রতিবেদনের জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়। ১৯ আগস্ট রাতে শিক্ষক জিয়াউর রহমানের ভাই আতিকুর রহমান বাদী হয়ে গাছা থানায় হত্যা মামলা করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঘটনার কোনো কিনারাই বের করতে পারেনি পুলিশ।

ভিসেরা প্রতিবেদন না আসায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেছেন গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন। তিনি বলেন, সোমবার পর্যন্ত নিহত দম্পতির ভিসেরা প্রতিবেদন আসেনি। এ কারণে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও দেওয়া হয়নি। প্রতিবেদন কবে আসবে, সেটিও বলা যাচ্ছে না।

তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শিক্ষক দম্পতির শরীরে বাহ্যিক আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মুখে কিছু লালার মতো পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তাই কীভাবে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, প্রাথমিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। প্রাইভেট কারে জমে থাকা গ্যাসে দুজন মারা যেতে পারেন কি না, তা-ও তদন্তের আওতায় নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁরা এমন কোনো খাবার খেয়েছিলেন কি না বা কেউ পূর্বশত্রুতার জেরে কিছু খাওয়াতে পারেন কি না, যাতে বিষ মেশানো থাকতে পারে, ওই সব বিষয়ও দেখা হচ্ছে। ঘটনার পর সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট যেসব আলামত সংগ্রহ করেছিল, সেগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

পুলিশ বলছে, ঘটনার পর থেকে সম্ভাব্য সব রকম চেষ্টা চালিয়ে তারা বিভিন্ন রকমের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে, কিন্তু ওই দম্পতির মৃত্যুর সঠিক কারণ খোঁজে পাওয়া যায়নি। তাই তারা আগের সংগ্রহ করা তথ্যগুলো আবার ঘেঁটে দেখছে কোথাও কিছু বাদ পড়ে গেছে কি না। গাড়ি ও নিহত দম্পতিকে উদ্ধারের স্থান থেকে পাওয়া ফুটেজেও তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কারণ জানা না গেলেও তাঁদের স্বজনেরা এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে দাবি করছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাছা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাদির উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, যেসব আলামত জব্দ করা হয়েছিল, সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। এসব আলামতের প্রতিবেদনও হাতে পাওয়া যায়নি। সবকিছু পাওয়া গেলে তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যগুলো মিলিয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে। তাই ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদনে কী তথ্য আসে, সেই অপেক্ষা করা হচ্ছে।